New Parliament Building

নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন ঘিরে বিরোধী ঐক্যের জেরে কি চাপে পড়বে মোদী সরকার?

পরবর্তী ধাপে ২০২২ সালের ১১ জুলাই যখন জাতীয় প্রতীক সিংহের ব্রোঞ্জের মূর্তির উদ্বোধন হয় তখনও আমন্ত্রিতের তালিকায় নাম ছিল না কোবিন্দের। যদিও সে সময়ও রাষ্ট্রপতির আসনে ছিলেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৩ ২৩:৫১
The overall political situation on inauguration of new Parliament building by PM Narendra Modi

সংসদ ভবনের উদ্বোধনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদীকে মোদী সরকার আমন্ত্রণ জানায়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অভিযোগটা সোমবার প্রথম তুলেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে— আগামী ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন যে সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে চলেছেন, সেই কর্মসূচিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। আর সেই সঙ্গেই ভারতীয় সংবিধানের ৭৯ নম্বর ধারার উল্লেখ করে তুলে দিয়েছিলেন একটি মোক্ষম প্রশ্ন। ওই ধারায় স্পষ্ট বলে হয়েছে, সংসদ রাষ্ট্রপতি, লোকসভা ও রাজ্যসভা নিয়ে গঠিত। তাই রাষ্ট্রপতিরই উচিত নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করা। কিন্তু উদ্বোধন দূর অস্ত্‌, রবিবারের অনুষ্ঠানে কেন রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণই জানানো হল না রাষ্ট্রপতিকে়? সেই সঙ্গেই জানতে চেয়েছিলেন, দেশের প্রথম তফসিলি জনজাতি রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে কেন কেন্দ্রের এই মনোভাব?

বিরোধী শিবিরের তরফে মঙ্গলবার রাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল প্রথম রাজনৈতিক দল হিসাবে সংসদ ভবন উদ্বোধন কর্মসূচি বয়কটের কথা ঘোষণা করেছিল। কয়েক ঘণ্টা পরেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল আম আদমি পার্টি (আপ)। বুধবার বিকেল পর্যন্ত কংগ্রেস, সিপিএম, আরজেডি, জেডিইউ, শিবসেনা (বালাসাহেব)-সহ মোট ১৯ দল সেই বয়কটের তালিকায় শামিল হয়েছে।

Advertisement

বিরোধীদের অভিযোগ, লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সব কৃতিত্ব নিতে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি নিজে প্রচারের সব আলো শুষে নিতে চান। সেই কারণে উপেক্ষা করা হচ্ছে দেশের প্রথম আদিবাসী (তফসিলি জনজাতি) রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদীকে। আমন্ত্রণ পাননি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা দলিত সমাজের প্রতিনিধি কোবিন্দও। কংগ্রেস সভাপতি খড়্গের অভিযোগ, নতুন ভবনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতিকে উপেক্ষা করার এই ইতিহাস নতুন নয়। নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাস হয়েছিল ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ সালে। কিন্তু সেই শিলান্যাস অনুষ্ঠানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

পরবর্তী ধাপে ২০২২ সালের ১১ জুলাই যখন জাতীয় প্রতীক সিংহের ব্রোঞ্জের মূর্তির উদ্বোধন হয় তখনও আমন্ত্রিতের তালিকায় নাম ছিল না কোবিন্দের। যদিও সে সময়ও রাষ্ট্রপতির আসনে ছিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে ২৮ মে দিনটি বিনায়ক দামোদর সাভারকরের ১৪০তম জন্মবার্ষিকী। বিরোধীদের অভিযোগ, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি, জওহরলাল নেহরুর জন্মদিবসকে উপেক্ষা করে সাভারকরের জন্মদিনকে সংসদ ভবনের উদ্বোধনের জন্য বেছে নিয়ে এক দিকে হিন্দুত্বের হাওয়া তুলতে, অন্য দিকে মহারাষ্ট্রের ভোটদাতাদের ‘বার্তা’ দিতে চাইছেন মোদী।

পথ দেখালেন মমতা

ঘটনাচক্রে মঙ্গলবার দুপুরেই মোদী সরকারের ‘দিল্লি দখলের অর্ডিন্যান্সের! বিরোধিতার নবান্নে এসেছিলেন আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। সঙ্গে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান এবং দলের দুই নেতা। রাতে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন নয়া সংসদ ভবন উদ্বোধন বয়কটের কথা জানিয়ে টুইটারে লেখেন, ‘‘সংসদ শুধুমাত্র একটি নতুন ভবন নয়, এটি একটি পুরানো ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, নজির এবং বিধিবদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিকতা। এটি ভারতীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী তা মানেন না। তাঁর জন্য, রবিবারের নতুন ভবনের উদ্বোধন হল ‘আমি, আমি, আমার’। তাই আমরা নেই।’’এর কিছু ক্ষণ পরেই আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ টুইট মমতার পথ অনুসরণের কথা জানান।

বয়কটের রাজনীতিতেই ‘বিরোধী ঐক্য’

বুধবার সকাল থেকেই তৃণমূলের পথ ধরে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রপতিকে অপমানের’ অভিযোগ তুলে একের পর এক বিরোধী দল মোদীর রবিবারের কর্মসূচি বয়কট করার কথা ঘোষণা করতে থাকে। ১৯টি বিরোধী দল যৌথ বিবৃতিতে লিখেছে, ‘‘সংসদ থেকে গণতন্ত্রের আত্মাকে শুষে নেওয়া হয়েছে। নতুন ভবনের কোনও অর্থ আমাদের কাছে নেই। এই পরিস্থিতিতে আমরা যৌথ ভাবে ঘোষণা করছি, নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠান বয়কট করছি।’

পাশাপাশি যৌথ বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘সর্ব ক্ষেত্রে কর্তৃত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে। এবং এই বার্তা আমরা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।’ ভারতীয় সংবিধানে সরকার, আইনসভা এবং বিচারব্যবস্থায় সুষ্পষ্ট বিভাজনরেখা রয়েছে। কিন্তু নয়া আইনসভা ভবনের উদ্বোধনে রাষ্ট্রপ্রধানকে (দ্রৌপদী) অনাহূত রেখে সরকার প্রধানের (প্রধানমন্ত্রী) উপস্থিতি সেই বিভাজনরেখা লঙ্ঘন বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এরই মধ্যে বুধবার কেজরীওয়াল সাক্ষাৎ করেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা (বালাসাহেব) নেতা উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে।

মোদী সরকারের অনুরোধ

৮ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বে মোদীকে এমন নজিরবিহীন বিরোধী ঐক্যের মুখে পড়তে হয়নি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। বুধবার কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর আচরণে তার আঁচ মিলেছে বলেও মনে করছেন তাঁরা। বিরোধীদের কাছে আগামী রবিবারের নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধন কর্মসূচি বয়কটের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে প্রহ্লাদ বলেন, ‘‘কিছু বিরোধী দল নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন বয়কটের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। আশা করব, তারা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে এবং কর্মসূচিতে যোগ দেবে।’’ যদিও কেন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে নয়া সংসদ ভবন উদ্বোধন কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হল না, তার কোনও ব্যাখ্যা দেননি বিজেপি নেতা প্রহ্লাদ।

নবীন পট্টনায়েকের ‘না’

তবে কংগ্রেস, আপ-সহ ১৮টি দলের মতো মমতার ‘পথ’ অনুসরণ করছেন না নবীন পট্টনায়ক। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর বিজু জনতা দল (বিজেডি) আগামী রবিবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে। নবীনের এই পদক্ষেপের ফলে দিল্লির ক্ষমতা দখলের অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় আপ প্রধান কেজরীওয়ালের জোটের উদ্যোগও ধাক্কা খেল বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার মমতা জানিয়েছিলেন, নবীনের বিজেপি এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস রাজ্যসভায় মোদীর দিল্লি দখলের অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করলে সরকারপক্ষ হেরে যেতে পারে। নবীনের দল কি বুধের সন্ধ্যায় নেতিবাচক বার্তা দিল মমতাকে?

আরও পড়ুন
Advertisement