সংসদ ভবনের উদ্বোধনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদীকে মোদী সরকার আমন্ত্রণ জানায়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তৃণমূল প্রথম রাজনৈতিক দল হিসাবে বয়কটের ঘোষণা করেছিল মঙ্গলবার রাতে। নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন কর্মসূচিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিবাদে বুধবার দুপুর পর্যন্ত আরও ১৮টি বিরোধী দল তৃণমূলকে ‘অনুসরণ’ করেছে। আম আদমি পার্টি (আপ), কংগ্রেস, আরজেডি, জেডিইউ, এনসিপির পাশাপাশি বামেরাও রয়েছে সেই তালিকায়।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের তরফে আগামী রবিবারের (২৮ মে) নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধন কর্মসূচি বয়কটের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হল বিরোধীদের কাছে। কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বুধবার বলেন, ‘‘কিছু বিরোধী দল নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন বয়কটের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। আশা করব, তারা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে এবং কর্মসূচিতে যোগ দেবে।’’
নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন কর্মসূচিতে রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ তুলে ১৯টি বিরোধী দল যৌথ বিবৃতিতে লিখেছে, ‘‘সংসদ থেকে গণতন্ত্রের আত্মাকে শুষে নেওয়া হয়েছে। নতুন ভবনের কোনও অর্থ আমাদের কাছে নেই। এই পরিস্থিতিতে আমরা যৌথ ভাবে ঘোষণা করছি, নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠান বয়কট করছি।’ পাশাপাশি লেখা হয়েছে, ‘সর্ব ক্ষেত্রে কর্তৃত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে। এবং এই বার্তা আমরা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।’’
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সংসদের অভিভাবক হলেন রাষ্ট্রপতি। কারণ, সংবিধানের ৭৯ ধারায় বলা হয়েছে, সংসদ রাষ্ট্রপতি, লোকসভা এবং রাজ্যসভা নিয়ে গঠিত। তাই তাঁরই উচিত নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করা। কিন্তু উদ্বোধন দূর অস্ত্, রবিবারের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তার ব্যাখ্যা হিসাবে বলা হচ্ছে, লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেই সব কৃতিত্ব নিতে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি নিজে প্রচারের সব আলো শুষে নিতে চান। সেই কারণে উপেক্ষা করা হচ্ছে দেশের প্রথম আদিবাসী (তফসিলি জনজাতি) রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদীকে। আমন্ত্রণ পাননি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা দলিত সমাজের প্রতিনিধি কোবিন্দও।
কংগ্রেস সভাপতি খড়্গের অভিযোগ, নতুন ভবনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতিকে উপেক্ষা করার এই ইতিহাস নতুন নয়। নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাস হয়েছিল ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ সালে। কিন্তু সেই শিলান্যাস অনুষ্ঠানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। পরবর্তী ধাপে ২০২২ সালের ১১ জুলাই যখন জাতীয় প্রতীক সিংহের ব্রোঞ্জের মূর্তির উদ্বোধন হয় তখনও আমন্ত্রিতের তালিকায় নাম ছিল না কোবিন্দের। যদিও সে সময়ও রাষ্ট্রপতির আসনে ছিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে ২৮ মে দিনটি বিনায়ক দামোদর সাভারকরের ১৪০তম জন্মবার্ষিকী। বিরোধীদের অভিযোগ, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি, জওহরলাল নেহরুর জন্মদিবসকে উপেক্ষা করে সাভারকরের জন্মদিনকে সংসদ ভবনের উদ্বোধনের জন্য বেছে নিয়ে হিন্দুত্বের পালে হাওয়া দিতে চাইছেন মোদী।