— প্রতীকী চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রথম ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। ২০১৮-য় তিনি প্রথম বলেছিলেন, স্বাধীনতার ৭৫তম বছর বা ২০২২-এ ভারতের জিডিপি-র পরিমাণ ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৫ লক্ষ কোটি ডলার হবে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার ছিল ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন।
তার পরে পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। দেশের অর্থনীতি এখনও ৫ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছয়নি। বারবার লক্ষ্য বদল হয়েছে। নতুন বছর ২০২৫-এ শাসক শিবির আর ৫ লক্ষ কোটি ডলারের জিডিপি নিয়ে কথা বলতেই রাজি নয়। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির রূপরেখা নিয়ে আলোচনার জন্য বিষয় বাছাই করেছিল। সম্প্রতি সেই বিষয়ের শিরোনাম বদলে ফেলা হয়েছে। তা থেকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি শব্দগুচ্ছই বাদ পড়েছে। বদলের আগে অর্থ মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির আলোচনার বিষয় ছিল, ‘বিশ্বের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির রূপরেখা।’ বিষয়ের শিরোনাম বদলে করা হয়েছে, ‘বিশ্বের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির রূপরেখা।’ বাদ পড়েছে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির কথা।
কেন এই বিষয় বদল?সূত্রের খবর, মোদী সরকার এখন আর জিডিপি-র নির্দিষ্ট পরিমাপ নিয়ে কথা বলতে রাজি নয়। ব্রিটেনকে ছাপিয়ে ভারত এখন পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। মোদী সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এখন ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির পথে এগোনোর কথা বলতে চান। সেই কারণেই বিজেপি সাংসদ ভর্ত্রুহরি মেহতাবের নেতৃত্বাধীন স্থায়ী কমিটির বিষয় বদল করা হয়েছে। ভারতের জিডিপি-র পরিমাণ এখনও ৩.৪১ লক্ষ কোটি ডলার। ভারতের সামনে রয়েছে আমেরিকা, চিন, জাপান ও জার্মানি। আমেরিকা, চিন বাদে জাপান বা জার্মানিও এখনও ৫ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারেনি।
অর্থ মন্ত্রকের আর একটি সূত্র বলছে, আসলে ভারতের জিডিপি কবে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছবে, তা নিয়ে এত বার লক্ষ্য বদল হয়েছে যে মোদী সরকার এখন এই বিষয়টাই ভুলতে চাইছে। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০২২-এ দেশের জিডিপি ৫ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছবে। তখন মনে হচ্ছিল, স্বাভাবিক বৃদ্ধির নিয়মেই তা সম্ভব হবে। কিন্তু তার পরে কোভিড, লকডাউনের ধাক্কায় জিডিপি কমে যায়। মোদী সরকার তখন লক্ষ্য পাল্টে ফেলে বলে, লোকসভা নির্বাচনের বছর ২০২৪-২৫-এ দেশের অর্থনীতি ৫ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছবে। কিন্তু গত জানুয়ারিতে লোকসভা নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী বাজেটের সময়ে অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, ৫ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছতে দেশের জিডিপি-র আরও তিন বছর সময় লাগবে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, ২০২৭-২৮-এ ভারত তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে। সেই সময়েই জিডিপি-ও ৫ লক্ষ কোটি ডলার ছোঁবে।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “এক দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। অন্য দিকে ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত। তার পরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পরে আমেরিকার আর্থিক নীতি কী হবে, বিশ্বের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও জ্বালানির দাম কোন দিকে যাবে, এ সব নিয়ে অনিশ্চয়তার জেরে আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস নিয়ে সরকাররক্ষণশীল মনোভাব নিয়েই চলতে চাইছে। এখন কেউই আর জিডিপি-র পরিমাণ নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন। আর্থিক বৃদ্ধির হার ধরে রাখাটাই আসল চ্যালেঞ্জ। স্থায়ী কমিটির বিষয় বদলেও তারই প্রতিফলন ঘটেছে।”