নীতীশ কুমার। —ফাইল চিত্র।
জোটবদলের প্রায় দু’সপ্তাহ পর, সোমবার বিহার বিধানসভায় আস্থাভোটের সম্মুখীন হতে চলেছেন জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। পাটিগণিতের অঙ্কে অবশ্য স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে এনডিএ। ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন ১২২টি আসন। নীতীশের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই রয়েছেন ১২৮ জন বিধায়ক।
‘জয়’ করেও অবশ্য ‘ভয়’ যাচ্ছে না এনডিএ শিবিরে। জোটের বড় শরিক বিজেপি তাদের ৭৮ জন বিধায়ককে বুদ্ধগয়ার একটি রিসর্টে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। রবিবার সন্ধ্যায় তাঁদের পটনায় ফেরানো হয়েছে। গত রবিবারই কংগ্রেস তাদের বিধায়কদের উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল হায়দরাবাদে। রবিবার সন্ধ্যায় পটনায় ফিরেছেন হাত শিবিরের ১৯ জন বিধায়কই। আর প্রধান বিরোধী দল আরজেডির ৭৯ জন বিধায়ক অস্থায়ী শিবির করে রয়েছেন প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বী যাদবের বাসভবনে। কংগ্রেস সূত্রে খবর, রবিবার রাতেই তেজস্বীর দেশরত্ন মার্গের সরকারি বাসভবনে পৌঁছে যাবেন কংগ্রেস বিধায়কেরা। তার পর সোমবার সকালে এক সঙ্গে বিধানসভায় যাবেন কংগ্রেস এবং আরজেডির বিধায়কেরা।
আরজেডি বিধায়কদের একটি ভিডিয়ো সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, আগুন জ্বালিয়ে এক সঙ্গে বসে গান গাইছেন তাঁরা। জেডিইউ এবং কংগ্রেস দুই দলেরই দাবি, তাদের বিধায়কেরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা শাকিল আহমেদ খান বলেন, “খেলা হবে। কংগ্রেস ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। সত্যের জয় হবে।”
বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, নীতীশের জয়ের ব্যাপারে কোনও সংশয় নেই। দলবদলের আশঙ্কা থেকেই বিধায়কদের বুদ্ধগয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, এমন জল্পনা খারিজ করে পদ্মশিবিরের তরফে দাবি করা হয়েছে, দু’দিনের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁদের। নীতীশকে স্বস্তি দিয়ে এনডিএ-র শরিক দল জিতনরাম মাঝির হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা (হাম) জানিয়েছে, তাদের চার জন বিধায়কই সোমবার নীতীশের পক্ষে ভোট দেবেন। মাঝে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল যে, শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্তবদল করতে পারেন জিতনরাম। তবে রবিবার সেই জল্পনা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে হামের তরফে।
তবে জেডিইউ শিবিরের আশঙ্কা বাড়িয়েছেন তিন বিধায়ক। নীতীশের দলের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, তিন বিধায়ক বিমা ভারতী, সুদর্শন কুমার এবং দিলীপ রাইয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। যদিও পরে জেডিইউ নেতা বসন্ত চৌধরি জানান, রবিবার পটনায় দলের বৈঠকে দু-তিন জন বিধায়ক না থাকলেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছে।
জেডিইউ, বিজেপি ছাড়াও নীতীশের সমর্থনে ভোট দেওয়ার কথা জিতনরাম মাঝির দল হামের চার বিধায়ক এবং এক নির্দল বিধায়কের। অন্য দিকে, বিরোধী শিবিরের হাতে রয়েছে ১১৪টি ভোট। আরজেডি, কংগ্রেস ছাড়াও বিরোধী শিবিরে রয়েছে তিন বাম দল সিপিআই, সিপিএম এবং সিপিআই(এমএল)। রাজ্যের একটি বিধায়ক রয়েছে আসাদুদ্দিন ওয়েইসির দল মিমের। তাঁর অবস্থান এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। মনে করা হচ্ছে যে, তিনি ভোটদানে বিরত থাকবেন। তবে সোমবার নীতীশের শিবির থেকে বিধায়ক ভাঙিয়ে বিরোধীরা চমক দেখায় কি না, কিংবা বিহার বিধানসভায় কোনও নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না, সে দিকে নজর থাকবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ জানুয়ারি আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগ করে আরও এক বার বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ শিবিরে শামিল হন নীতীশ। ওই দিন সকালেই ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিকেলেই এনডিএ-র মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন তিনি।