Sunita Williams Return

অবতরণের পথ কঠিন, ত্রুটির জায়গা থাকে না

পৃথিবী থেকে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা-ও নিঃসন্দেহে কঠিন। তবে তুলনামূলক ভাবে ঝুঁকি কম। কারণ, পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রভাব কাটিয়ে দ্রুত বেগে ওঠার সময় ক্রমশ বেশি ঘনত্বের বায়ু থেকে কম ঘনত্বের বায়ুর দিকে ওঠে রকেট।

Advertisement
তপন মিশ্র (ইসরোর প্রাক্তন উপদেষ্টা এবং স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের প্রাক্তন অধিকর্তা)
শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫ ০৭:৫৩
কল্পনা চাওলা।

কল্পনা চাওলা। —ফাইল চিত্র।

মহাকাশ থেকে প্রবল গতিতে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা সোজা। কিন্তু কঠিন হল, নির্দিষ্ট একটি কোণ তৈরি করে বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে আসা এবং ক্রমাগত বায়ুর সঙ্গে ঘর্ষণ সহ্য করে নিরাপদে অবতরণ। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকে সুনীতাদের পৃথিবীতে অবতরণের এই কঠিন কাজ যে নিরাপদেই মিটেছে, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এ কথাও সত্যি, সামান্য ত্রুটি বা ভুলে চরম বিপদ ঘটে যেতে পারত। যেমন ঘটেছিল কল্পনা চাওলাদের কলম্বিয়া মহাকাশযানের ক্ষেত্রে।

Advertisement

পৃথিবী থেকে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা-ও নিঃসন্দেহে কঠিন। তবে তুলনামূলক ভাবে ঝুঁকি কম। কারণ, পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রভাব কাটিয়ে দ্রুত বেগে ওঠার সময় ক্রমশ বেশি ঘনত্বের বায়ু থেকে কম ঘনত্বের বায়ুর দিকে ওঠে রকেট। তাই যত সময় গড়ায় ততই ঘর্ষণের মাত্রা কমে। কিন্তু মহাকাশ থেকে মাটির দিকে নেমে আসার সময় ঘটে তার উল্টো। যত বায়ুমণ্ডলের ভিতরে ঢুকতে থাকে মহাকাশযান, ততই বায়ুর সঙ্গে ঘর্ষণে তাপ তৈরি হয়। বায়ুর সঙ্গে ঘর্ষণে মহাকাশযানের চারপাশে তৈরি হয় এক প্লাজ়মার আবরণ, যার উত্তাপ প্রায় দেড় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস!

এই প্রবল উত্তাপ থেকে মহাকাশযানকে রক্ষা করার জন্য তার গায়ে তাপনিরোধী একটি স্তর থাকে (ইনসুলেশন)। কিন্তু সেই স্তর যদি সামান্য খসে যায় তা হলেই প্লাজ়মা ঢুকে মহাকাশযানকে পলকের মধ্যে ছারখার করে দিতে পারে। কল্পনা চাওলার সময়ে এমনই ঘটেছিল। ঘর্ষণের মাত্রা যত বাড়বে ততই এই প্লাজ়মা তৈরি হবে। তাই সোজাসুজি বা উল্লম্ব ভাবে বায়ুমণ্ডলে না ঢুকে একটি বিশেষ কোণে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে মহাকাশযান। এই কোণকে বলা হয়, ‘ক্রিটিক্যাল অ্যাঙ্গল’। এই কোণের মাপে গরমিল হলে বিপদের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তাই এই পর্বের প্রতি পদক্ষেপই হতে হয় নিখুঁত। সামান্য ত্রুটিরও জায়গা থাকে না।

মহাকাশ থেকে নিরাপদে নেমে আসার পরেও মহাকাশচারীদের বেশ কিছু দিন ঝুঁকি নিয়েই থাকতে হয়। তাই মহাকাশযান থেকে উদ্ধার করেই তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় তাঁদের। কেন? এর কারণ, মহাকাশে অভিকর্ষ বল কাজ করে না। তাই মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছলেও পায়ের দিকে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে না। দুর্বল হয়ে পড়ে শরীরের পেশি এবং হাড়ের ক্ষতিও হয়। এ সব প্রতিরোধ করতে মহাকাশে থাকাকালীন কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম করতে হয়। কিন্তু সেটাই সব নয়। তাই মহাকাশ থেকে ফিরেই স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতেও কার্যত অক্ষম হয়ে পড়েন মহাকাশচারীরা। উপরন্তু, মহাকাশে কোনও জীবাণু না থাকায় শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্বাভাবিক কাজ ভুলে যায়। তাই হাসপাতালে রেখে মহাকাশচারীদের শরীর ফের পৃথিবীর পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হয়। এই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেতে এক থেকে চার মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

(অনুলিখন: কুন্তক চট্টোপাধ্যায়)

Advertisement
আরও পড়ুন