Bangladesh Situation

বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ, প্রস্তাব আনছে আরএসএস

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির নাম বাছাই নিয়ে সঙ্ঘ ও বিজেপির মধ্যে মতানৈক্যের আবহেই আজ থেকে বেঙ্গালুরুতে আরএসএসের তিন দিনের অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভা শুরু হয়েছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ০৭:৫০

— প্রতীকী চিত্র।

গত দু’বছর ধরে চলতে থাকা মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে আজ উদ্বেগ জানালেন আরএসএস নেতৃত্ব। উদ্বেগ জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়েও।

Advertisement

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির নাম বাছাই নিয়ে সঙ্ঘ ও বিজেপির মধ্যে মতানৈক্যের আবহেই আজ থেকে বেঙ্গালুরুতে আরএসএসের তিন দিনের অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভা শুরু হয়েছে। সেখানে সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবতের উপস্থিতিতে আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক বা সরকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসাবলে যে বার্ষিক রিপোর্টটি পেশ করেন, তাতে মূলত চারটি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মণিপুর ও বাংলাদেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতি, উত্তর-দক্ষিণ ভারতের বিভাজন ছাড়াও সফল ভাবে কুম্ভ সম্পন্ন করায় সরকারের প্রশংসা করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। সূত্রের মতে, বার্ষিক ওই রিপোর্টে হিংসা দীর্ণ মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে, গত কুড়ি মাসে মণিপুরের পরিস্থিতি কী ভাবে উত্তরোত্তর খারাপ হয়েছে, তা যেমন রিপোর্টে রয়েছে, তেমনই গোষ্ঠী সংঘর্ষের ফলে সমাজে যে আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে, উল্লেখ করা হয়েছে সেই বিষয়টিও। তবে একই সঙ্গে প্রশংসা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকারও।

মণিপুরের ধারাবাহিক খারাপ পরিস্থিতির কথা উত্থাপন করে, আজ সাংবাদিক সম্মেলনে সহ-সরকার্যবাহ সি আর মুকুন্দ বলেন, ‘‘গত কুড়ি মাস ধরে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে মণিপুর। তবে (রাষ্ট্রপতি শাসন জারি পরে হওয়ায়) ওই রাজ্যে যে ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় নাগরিক সমাজ এগিয়ে এসে কাজ শুরু করেছে, তাতে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখা দিয়েছে।’’ সঙ্ঘ পরিবারের একাধিক শাখা সংগঠনও মণিপুরে শান্তি ফেরাতে তৎপর রয়েছে বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছরে দেশে ৭৩,৬৪৬ শাখা থাকলেও, শতবর্ষের বছরে শাখার সংখ্যা লক্ষের নিশানা ছাপিয়ে গিয়েছে। বেড়েছে যোগদানও। গত বছর ১.৬৩ লক্ষ তরুণ (১৪-২৫ বয়সি) শাখায় যোগদান করেছেন। প্রায় কুড়ি হাজার চল্লিশোর্ধ ব্যক্তিও গত এক বছরে শাখায় যোগ দিয়েছেন।

বার্ষিক রিপোর্টে প্রতিবেশী বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, সে দেশে পালাবদলের পর থেকে হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের উপরে হামলা জারি রয়েছে বলে অভিযোগ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার পরেই বাংলাদেশে ধারাবাহিক ভাবে উৎপীড়নের শিকার হচ্ছেন হিন্দুরা। কট্টরপন্থীরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবার বেছে আক্রমণ শানিয়েছে। এরও নিন্দা করা হয়েছে রিপোর্টে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে নয়াদিল্লির উদ্বেগ ও বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে বিশ্ব জুড়ে ভারত যে ভাবে বাংলাদেশের উপরে চাপ তৈরির চেষ্টা করে চলেছে, তার প্রশংসা করা হয়েছে রিপোর্টে। এ বারের বৈঠকে দু’টি প্রস্তাব আনতে চলেছে আরএসএস। সূত্রের মতে, একটি প্রস্তাব সঙ্ঘের একশো বছর পূর্তি উদ্‌যাপন কী ভাবে হবে, তা নিয়ে। অন্য প্রস্তাবে বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘু সমাজের উপর হয়ে চলা নিপীড়নের বিষয়টি থাকতে চলেছে। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রসঙ্গটিকে সামনে নিয়ে আসাকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

রিপোর্টে উঠে এসেছে ভাষা-দ্বন্দ্ব ঘিরে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের ‘বিভাজন তৈরির প্রচেষ্টা’র কথাও। আজই সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভাষা-দ্বন্দ্বে ডিএমকে-র রাজনীতিকে দায়ী করেন। সঙ্ঘও সেই সুরে কথা বলছে। বিষয়টি নিয়ে সঙ্ঘের রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি বলা হয়েছে, দেশ-বিরোধী কিছু শক্তি ভাষা, প্রান্ত, জাতি, সম্প্রদায়ের নামে ষড়যন্ত্র চালিয়ে দেশের আবহাওয়াকে খারাপ করতে তৎপর। মুকুন্দ বলেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে লড়াই আদৌও সুখের হয় না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অধিকাংশ বিতর্কই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত। কিন্তু স্থানীয় ভাষায় টাকার প্রতীক ব্যবহার কিংবা স্কুলে তামিল ভাষা শিক্ষা দেওয়া— এ ধরনের বিষয়গুলি আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা সম্ভব।’’ মুকুন্দ মনে করেন, আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত বিতর্ক মেটাতে কেন্দ্র-রাজ্য আলোচনা প্রয়োজন। তবে স্ট্যালিনের লাগাতার প্রচারে সে রাজ্যে বিজেপির প্রতি বিরূপ মনোভাব দেখা দিতে পারে বলে তামিলনাড়ুতে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সঙ্ঘ।

Advertisement
আরও পড়ুন