সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্স নিয়ে দিল্লি সরকারের আর্জি সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ জানায়, শীর্ষ আদালত বিষয়টিকে সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠাচ্ছে।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে লেফটেন্যান্ট গভর্নর (উপরাজ্যপাল) ভিকে সাক্সেনার হয়ে আদালতে সওয়াল করার জন্য উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী হরিশ সালভে। দিল্লির আপ সরকারের কৌঁসুলি ছিলেন অভিষেক মনু সিংভি। কেন্দ্রের তরফে আদালতে উপস্থিত ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা। সম্প্রতি দিল্লির বিদ্যুৎ নিগমের প্রধান হিসাবে কাকে নিয়োগ করা হবে, সে বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছতে পারেননি দিল্লির উপরাজ্যপাল এবং অরবিন্দ কেজরীওয়ালের নেতৃত্বাধীন দিল্লি সরকার। বৃহস্পতিবার বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ বলে ব্যাখ্যা করে আদালতের পর্যবেক্ষণ, “প্রতিষ্ঠানের গরিমা নিয়ে কেউই ভাবিত নন।”
গত ১৭ জুলাই এই মামলার শুনানিতে রাজনৈতিক মতভেদ দূরে সরিয়ে আমলাদের নিয়োগ এবং বদলি সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স (অধ্যাদেশ) নিয়ে বিরোধ মেটাতে দিল্লির উপরাজ্যপাল (লেফটেন্যান্ট গভর্নর) ভিকে সাক্সেনা এবং মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে ‘পরামর্শ’ দিল সুপ্রিম কোর্ট। মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় যুযুধান দু’পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক মতভেদের ঊর্ধ্বে উঠে অচলাবস্থা কাটাতে আপনারা কি মুখোমুখি আলোচনায় বসতে পারেন না?’’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি করেছিল শীর্ষ আদালতেই তা চ্যালেঞ্জ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধান কেজরীওয়াল। গত ৩০ জুন দিল্লি সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্সের জেরে দিল্লির ‘ইলেক্ট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন’-এর চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বলে সরকার পক্ষের তরফে অভিযোগ করায় সোমবার ‘আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্রের সন্ধান করার’ কথা বলেছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ২৩৯এএ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অর্ডিন্যান্স জারি করেছে, তাই শুনানি সাংবিধানিক বেঞ্চে স্থানান্তরিত হওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, গত ১১ মে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছিল, আমলাদের রদবদল থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে দিল্লির নির্বাচিত সরকারের। এর পর হঠাৎ গত ১৯ মে গভীর রাতে অর্ডিন্যান্স এনে ১০ পাতার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাতে বলা হয়, ‘জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হচ্ছে। আমলাদের নিয়োগ ও বদলির ব্যাপারে তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। অধ্যাদেশে জানানো হয়, (দিল্লির) মুখ্যমন্ত্রী হবেন এর চেয়ারপার্সন। সদস্য হিসেবে থাকবেন মুখ্যসচিব এবং প্রিন্সিপাল স্বরাষ্ট্রসচিব। নিয়োগ ও বদলি সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত এই কর্তৃপক্ষ ভোটাভুটির মাধ্যমে চূড়ান্ত করবেন। মতবিরোধ হলে শেষ কথা বলবেন উপরাজ্যপাল।