সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর কাণ্ডের পর থেকে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এ বার সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিল, আরজি কর হাসপাতালে নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য।
প্রধান বিচারপতি জানতে চান, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করা হয়েছে কি না। জবাবে রাজ্য জানায়, তাঁকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানায় রাজ্য। ২২ অগস্ট সিবিআইকে তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে শীর্ষ আদালত। হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিয়েও ওই দিন রিপোর্ট দেবে রাজ্য। ২২ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। দেশ জুড়ে আন্দোলনরত চিকিৎসকরা যাতে কাজে ফেরেন, সেই অনুরোধও করেন প্রধান বিচারপতি।
মহিলারা যাতে আরও বেশি করে কাজে যোগদানে উৎসাহ পান, সে দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ প্রধান বিচারপতির। তিনি বলেন, “দেশ আবার একটি ধর্ষণ আর খুনের জন্য অপেক্ষা করবে না, যে তার পর পরিবর্তন হবে।” চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সাত জনের জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। টাস্ক ফোর্স দু'টি বিষয়ে পরিকল্পনা করবে — প্রথমত, নারী পুরুষ নির্বিশেষে চিকিৎসা পেশায় হিংসা রুখতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিরাপদ কাজের পরিবেশের জন্য একটি প্রটোকল তৈরি করতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা খুবই চিন্তিত। প্রতিবাদকারীদের বাধা দিতে নিজের শক্তি প্রয়োগ করে রাজ্য। ৯ অগস্ট থেকে পুরো বিষয়টি আমরা মনের মধ্যে কল্পনা করছি। কী কী হচ্ছে সেখানে? আমরা কিছুতেই বুঝতে পারছি না স্বাধীনতা দিবসের দিন রাজ্য কী ভাবে হাসপাতাল ভাঙচুর করতে দিল?” তিনি মন্তব্য করেন, “চিকিৎসা পেশায় হিংসা রুখতে হবে। অনেকে মনের মধ্যে গেঁথে রয়েছে, এই সমাজ পুরুষশাসিত। সেখানে মহিলারা আরও বেশি করে নিশানা হচ্ছেন। এটা দুঃখজনক।”
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে জানান, “ওই চিকিৎসকের উপর পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। কিন্তু মৃতার বাবাকে ৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল।” আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনা নিয়েও উদ্বেগপ্রকাশ করেন তিনি। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সলিসিটর জেনারেলের যুক্তি, “৫০০ লোকের জমায়েত হলে আমরা বলি ভাল লোক এসেছে। সেখানে সাত হাজার লোক হাসপাতাল ভাঙচুর করল। এটা কি আইনশৃঙ্খলার নমুনা?”
কার অভিযোগের ভিত্তিতে এবং কখন প্রথম এফআইআর দায়ের হয়েছিল, সেই তথ্য জানতে চান বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা। জবাবে রাজ্যের আইনজীবী জানান, রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে মৃতার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথম এফআইআর হয়েছিল। পরে অধ্যক্ষ অভিযোগ জানান। এর পরই প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন করেন, “সৎকারের জন্য মৃতদেহ কখন পরিবারকে দেওয়া হয়? এফআইআর দায়ের হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেহ দিয়ে দিলেন?” আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠল সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “বিকালে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয় খুন। এফআইআর দায়ের হয়েছিল রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে। তার আগে কী করছিলেন অধ্যক্ষ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ? ওই সময়ে মৃতার বাবা-মা ছিলেন না। হাসপাতালের দায়িত্ব ছিল এফআইআর দায়ের করা।”
সন্দীপ ঘোষ আরজি করের অধ্যক্ষ পদে ইস্তফা দেওয়ার পর কী ভাবে তাঁকে আবার অন্য কোথাও বদলির নির্দেশ দেওয়া হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবারের মধ্যে সিবিআইয়ের থেকে স্ট্যাটাস রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, একটি ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখবে সেই টাস্ক ফোর্স।
আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উষ্মাপ্রকাশ শীর্ষ আদালতের। আরজি করের সামগ্রিক ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলে প্রধান বিচারপতি বলেন, “প্রথমে ঠিক ভাবে এফআইআর করা হয়নি। পুলিশ কী করছিল? একটা হাসপাতালের মধ্যে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। পুলিশ কি হাসপাতাল ভাঙচুর করার অনুমতি দিচ্ছিল?”
প্রধান বিচারপতি জানান যে অভিযোগ উঠেছে, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে। অধ্যক্ষ এটিকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চেয়েছিলেন। এমনকি পরিবারকে মৃতদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। যদিও রাজ্যের তরফে আইনজীবী তখন জানান, এই অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। সে কথা শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এটি পরিষ্কার যে খুন করা হয়েছে। প্রথমে এফআইআরে কি তা উল্লেখ ছিল? অধ্যক্ষ কী করেছেন?”
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় প্রশ্ন করেন, মহিলারা নিরাপদে কাজে যেতে না পারলে, সমাজে সবার অধিকার থাকবে কী ভাবে? তাঁর মন্তব্য, “মৃতার নাম ও ছবি ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখানো হচ্ছে।”
মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এটা নির্দিষ্ট কোনও ঘটনা নয়। আমরা দেশ জুড়ে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। চিকিৎসকরা যাতে নিরাপদে কাজ করতে পারেন সেই দিকটি নিশ্চিত করা দরকার।”
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে শুরু হল আরজি কর মামলার শুনানি। ১৮ অগস্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা গ্রহণ করেছিল শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবারই এই মামলার প্রথম শুনানি সুপ্রিম কোর্টে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে উপস্থিত রয়েছেন আইনজীবী কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিংভি-সহ অন্য আইনজীবীরা। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও রয়েছেন এজলাসে। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে আরজি কর মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পরে সুপ্রিম কোর্টে বসল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। আরজি করের মামলায় শীর্ষ আদালতে মঙ্গলবার কী কী বিষয় উঠে আসে, সে দিকে নজর গোটা রাজ্যের।
আরজি কর-কাণ্ড ঘিরে দেশ জুড়ে উত্তাল আবহের মাঝে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে মঙ্গলবার প্রথম শুনানির জন্য উঠছে আরজি করের মামলা। উল্লেখ্য, গত ৯ অগস্ট ভোরে আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় সেমিনারকক্ষ থেকে উদ্ধার হয়েছিল মহিলা চিকিৎসকের দেহ। তাঁকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রাথমিক ভাবে ওই মামলার তদন্ত চালাচ্ছিল কলকাতা পুলিশ। এক জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। এর পর কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। আপাতত অভিযুক্ত সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন।
এক সপ্তাহ হল, সিবিআই তদন্তভার হাতে পেয়েছে। এর মধ্যেই আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। পর পর চার দিন চলেছে জিজ্ঞাসাবাদের পর্ব। এ সবের মধ্যেই ধৃত অভিযুক্তের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করাতে উদ্যোগী হয়েছে সিবিআই। সূত্রের খবর, সোমবারই এই নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা।
আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারেরা প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। আন্দোলন করছেন। কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ইতিমধ্যেই কর্মস্থলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা-সহ মোট পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছে। কেন্দ্রের তরফেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কর্মস্থলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশের জন্য একটি কমিটি গঠিত হবে।