প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দত্তক নেওয়ার আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আবেদনের ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ শনিবার দত্তক নেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রকে।
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে শনিবার শীর্ষ আদালতকে জানানো হয়, প্রতি বছর দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার শেষে ভারতে গড়ে ৪,০০০ শিশুকে দত্তক নেওয়া হয়। অন্য দিকে, অনাথ শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। আবেদনকারী পক্ষের অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে বহু সন্তানহীন দম্পত্তি দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করে দীর্ঘ দিন ধরে প্রতীক্ষা করছেন। অন্য দিকে, বহু অনাথ শিশু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ‘ঘর’ পাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, গত বছর ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছিল, ভারতে শিশু দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করা দরকার। তাদের দাবি ছিল, ‘সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি’-র অধীনে একটি সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য তিন থেকে চার বছর সময় লেগে যায়, অথচ লক্ষ লক্ষ শিশু অপেক্ষায় থাকে। অভিযোগের ভিত্তিতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান পীযূষ সাক্সেনাকে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছিল শীর্ষ আদালত। সেই রিপোর্টেও ওই অভিযোগই উঠে এসেছে।
প্রসঙ্গত, দত্তক গ্রহণের প্রক্রিয়া আগে আদালতের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’ (শিশু সুরক্ষা আইন) সংশোধন করে দত্তকের প্রক্রিয়াটি জেলা প্রশাসনের আওতায় আনা হয়। শিশুকে কোনও পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার আগে কঠোর ভাবে বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয় সরকারি নির্দেশিকায়। যাঁরা দত্তক নিচ্ছেন, সেই পরিবার আর্থিক ভাবে কতটা সচ্ছল, তাঁদের শংসাপত্রগুলি বৈধ কি না, তা-ও খুঁটিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।
কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, এই সব বিষয় নিশ্চিত করতেই অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে। শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চায় না সরকার। কিন্তু প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় শনিবার কার্যত সেই যুক্তি খারিজ করে বলেন, ‘‘বিষয়টি মানবিক দিক থেকে দেখতে হবে। কেন সন্তানহীন কোনও দম্পতি একটি শিশুকে দত্তক নেওয়ার জন্য তিন-চার বছর অপেক্ষা করবেন?’’ দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার নেপথ্যে ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করে এ বিষয়ে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দেন তিনি।