যোগী আদিত্যনাথ। —ফাইল চিত্র।
গোড়াতেই অশনিসঙ্কেত।
যে কুম্ভমেলার আসরকে সামনে রেখে নিজেকে হিন্দু সমাজের প্রধান মুখ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন যোগী আদিত্যনাথ, শুরুর সাত দিনের মাথাতেই তাতে আগুন লেগে যাওয়ায় সেই উদ্যোগে অনেকটাই চোনা পড়ে গেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। যোগী প্রশাসন আজ নিশ্চিন্তে পুণ্যার্থীদের কুম্ভে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে এই অগ্নিকাণ্ড যে সরকারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেবে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে সরকার।
এ বার পূর্ণ কুম্ভের যেআয়োজন হয়েছে, তাতে একমাত্র মুখ হিসাবে উঠে এসেছেন যোগী আদিত্যনাথ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও কুম্ভের প্রস্তুতি দেখতে যেতে দেখা যায়নি। বিশ্বনাথ করিডর থেকে রামমন্দির নির্মাণ— হিন্দুত্বের বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রধানমন্ত্রীকে বারংবার এগিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে, প্রয়াগ সঙ্গমে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অনুপস্থিত তিনি। গোড়া থেকেই যাবতীয় প্রচারের আলো শুষে নিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। তিনি জানেন, পূর্ণ কুম্ভের সফল আয়োজন তাঁকে তৃতীয় বার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়া নিশ্চিত তো করবেই, উপরন্তু ২০২৯ সালে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তাঁর দাবিকেও পোক্ত করবে।
কিন্তু শুরুর এক সপ্তাহের মাথায় কুম্ভে অগ্নিকাণ্ড যোগীর স্বপ্নপূরণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ সাফল্যের যাবতীয় কৃতিত্ব যেমন যোগীর, তেমনই ব্যর্থতার যাবতীয় দায়ও যে তাঁকে নিতে হবে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন তিনি নিজেই। ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রী ফোন করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু অগ্নিকাণ্ড নিয়ে দলের ভিতরে যে প্রশ্ন উঠবে, তা নিশ্চিত। প্রশ্ন উঠবে যোগীর প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়েও। সুযোগ পেয়ে চেপে ধরেছেন বিরোধীরাও। ঠিক বারো বছর আগে প্রয়াগে মহাকুম্ভের সময় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন অখিলেশ সিংহ যাদব। কেন্দ্রে সে সময় ছিল মনমোহন সিংহের সরকার। অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন রাজ্যের বিজেপি নেতারা। আর এ বার বিরোধী নেতা হিসেবে কুম্ভমেলায় আগুন লাগার সমালোচনা করলেন এসপি নেতা অখিলেশ। অখিলেশের কথায়, “আগুন লাগার ঘটনার দিকে সর্বাগ্রে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন এবং এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।” আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুম্ভমেলা চলার কথা। ঘটনাবিহীন কুম্ভ সম্পন্ন করাই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জযোগীর কাছে।