(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
অবৈধ অভিবাসীদের ভারতে ফেরত পাঠানো, এইচওয়ান বি ভিসা সংক্রান্ত উদ্বেগ, বাণিজ্যনীতি নিয়ে সংশয়, বাড়তি শুল্ক চাপানোর ব্যাপারে আশঙ্কা রয়েছেই আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইনিংসের দ্বিতীয় ইনিসের সূচনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ দূত হিসাবে তিন দিনের ওয়াশিংটন সফর সেরে তবু ইতিবাচক বার্তাই দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। কিন্তু আগামী কয়েক মাসে কী ভাবে আমেরিকার সঙ্গে মসৃণ ভাবে এগোনো হবে, তার কৌশল রচনা শুরু হয়ে গিয়েছে সাউথ ব্লকে।
সূত্রের খবর, আগামী মাসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি মুখোমুখি বৈঠক করানোর জন্য তৎপর নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের আশা, দু’জনের ব্যক্তিগত রসায়নকে কাজে লাগিয়ে প্রথমেই যদি একটি বৈঠকে ইতিবাচক সূচনা করিয়ে দেওয়া যায়, পরবর্তী পথ চলা কিছুটা সুবিধাজনক হবে। প্রসঙ্গত আগামী মাসে প্যারিসে কৃত্রিম মেধা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ওই সম্মেলনে আমন্ত্রিত ডোনাল্ড ট্রাম্পও। বিদেশ মন্ত্রক শিবিরের গুঞ্জন, যদি ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত না যান, তা হলে সমান্তরাল ভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফরের। তার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন ট্রাম্পের তরফ থেকে আমন্ত্রণ আসা।
অন্য দিকে ট্রাম্পের আমলে আমেরিকা তার বাণিজ্যনীতিতে কী কী বদল করতে পারে, ভারত থেকে কোন কোন পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে কতখানি শুল্ক চাপাতে পারে, তা নিয়ে মোদীর বাণিজ্য মন্ত্রক ইতিমধ্যেই আন্তঃমন্ত্রক আলোচনা শুরু করেছে। অর্থ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের কর্তারা ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট বাণিজ্য নীতি’র প্রস্তাবনা নিয়ে চুলচেরা বিচার শুরু করেছেন। আমেরিকা ভারতের সবথেকে বড় বাণিজ্য-শরিক। গত অর্থ বছরে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২০০০ কোটি ডলার।
এ দেশে তৈরি ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের রফতানিতে প্রধান গন্তব্য আমেরিকা। ডিসেম্বর মাসেও ভারত থেকে আমেরিকায় সবথেকে বেশি মূল্যের ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রফতানি হয়েছে, যার পরিমাণ ছিল ১৬৪ কোটি ডলার। ইঞ্জিনিয়ারিং রফতানি উন্নয়ন পরিষদ (ইইপিসি)-এর চেয়ারম্যান পঙ্কজ চড্ডা বলেন, ‘‘রফতানি বাড়ছে ঠিকই। কিন্তু আমেরিকা কী রকম রক্ষণশীল নীতি নেবে এবং বাণিজ্য বা শুল্ক-যুদ্ধের আশঙ্কা কেমন থাকবে, তার উপরেই ভবিষ্যতের বাণিজ্য নির্ভর করছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকায় নতুন বাজার খুঁজতে হবে।’’ রফতানিকারীদের সর্বভারতীয় সংগঠন ফিও-র অশ্বিনী কুমারের মতে, আমেরিকা চিনা পণ্যে চড়া শুল্ক চাপালে আবার ভারতের সামনে সুযোগ খুলতে পারে। প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, তা হলে আমেরিকায় ভারতের রফতানির পরিমাণ ২৫০০ কোটি ডলার বাড়তে পারে। ভারতীয় পণ্যের বিপণনের জন্য অর্থ মন্ত্রকের কাছে বছরে তাই ২৫০ কোটি ডলারের তহবিল তৈরির আর্জি জানিয়েছে ফিও।