(বাঁ দিকে) শরদ পওয়ার এবং (ডান দিকে) অজিত পওয়ার। —ফাইল চিত্র।
অজিত পওয়ার শিবিরে চলে যাওয়া দুই সাংসদ ও ন’জন বিধায়ককে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে সবুজ সঙ্কেত দিল শরদ পওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি। আজ দিল্লিতে শরদের নেতৃত্বে হওয়া জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে দলের বিদ্রোহী নেতাদের বিরুদ্ধে ওই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। যদিও মহারাষ্ট্র থেকে অজিত পাল্টা দাবিতে জানিয়েছেন, যে হেতু তিনি দলের সভাপতি, তাই শরদ পওয়ারের নেতৃত্বে হওয়া দিল্লির বৈঠক গুরুত্বহীন। গত রবিবার ফোন করার পরে আজ ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা শরদের বাসভবনে এসে দেখা করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সূত্রের খবর, তিনি শরদকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, এনসিপি-র ভাঙন বিরোধী জোটে প্রভাব ফেলবে না। গত রবিবার শরদকে ফোন করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
গত কাল রাজ্য স্তরে নিজেদের শক্তি পরীক্ষায় নেমেছিল অজিত বনাম শরদ শিবির। যাতে স্পষ্ট হয়ে যায় মহারাষ্ট্রে এনসিপির ৫৩ জন বিধায়কের মধ্যে অন্তত ২৯ জনের সমর্থন অজিতের পক্ষে রয়েছে। এই আবহে আজ দিল্লিতে জাতীয় কর্মসিমিতির বৈঠক ডাকেন শরদ। বৈঠকের পরে দাবি করা হয়, আঠাশটি রাজ্য শাখার নেতৃত্ব শরদের পাশে রয়েছেন। সংসদের দু’কক্ষের ৯ সাংসদের মধ্যে সাত জনই সমর্থন জানিয়েছেন শরদকে। যদিও ওই বৈঠক চলাকালীনই মুম্বই থেকে অজিত বিবৃতি দিয়ে জানান, তিনি দলের সভপাতি। তাই দিল্লিতে শরদের নেতৃত্বে চলা বৈঠকের কোনও গুরুত্ব নেই। ওই বৈঠক অবৈধ।
দিল্লিতে আজকের কর্মসমিতির বৈঠকে শরদের নেতৃত্বের উপরেই আস্থা রাখা হয়েছে। বৈঠক শেষে শরদ শিবিরের নেতা পি সি চাকো জানান, বৈঠকে দলের রাজ্যসভার সাংসদ প্রফুল্ল পটেল, লোকসভার সাংসদ সুনীল টাটকারে-সহ গত রবিবার যে ন’জন এনসিপি বিধায়ক এনডিএ-তে যোগদানের শপথ নিয়েছিলেন, তাঁদের দল থেকে বহিষ্কারের প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে অজিত পওয়ারকে বহিষ্কার করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা হয়নি। যদিও শরদ-ঘনিষ্ঠ শিবিরের দাবি, রবিবার যে ন’জন শপথ নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অজিতও রয়েছেন। তাই দল থেকে বহিষ্কারের তালিকায় রয়েছেন তিনিও। পারিবারিক কাদা ছোড়াছুড়ি এড়াতেই তাঁর নাম রাখা হয়নি। এরই মধ্যে গত কাল এক প্রস্থ শক্তি যাচাইয়ের পরে আগামিকাল মহারাষ্ট্রের বিধানসভা অধিবেশনে মুখোমুখি হতে চলেছেন এনসিপির দু’শিবিরের যুযুধান নেতারা। অজিত শিবিরের দাবি, সেখানেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, কত জন এনসিপি বিধায়ক তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন।
অভ্যন্তীরণ বিবাদে দুর্বল হয়ে পড়া শরদ শিবিরের পাশে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতৃত্ব। আজ বিকালে এনসিপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শেষ হতেই শরদের বাড়ি চলে আসেন রাহুল। প্রায় কুড়ি মিনিট কথা বলেন দুই নেতা। রাহুল তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিয়ে আসন্ন ১৭-১৮ জুলাইয়ের বেঙ্গালুরুর বৈঠকে শরদকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করেন। শরদও রাহুলকে আশ্বাস দিয়ে জানান, তিনি ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। তবে শরদের দলে বিভাজন হওয়ায় রাজনৈতিক সমীকরণের প্রশ্নে সুবিধেজনক অবস্থায় রয়েছে কংগ্রেস বা তৃণমূলের মতো দলগুলি। অনেকের মতে, এর ফলে আগামী দিনে বিরোধী জোটের প্রবীণতম নেতা হিসেবে শরদ পওয়ারের ছড়ি ঘোরানোর জায়গা কমে গেল। ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের আগে রাফাল নিয়ে রাহুল গান্ধীর তোলা অভিযোগ বা পরবর্তী সময়ে সাভারকরকে নিশানা করা বা আদানি গোষ্ঠীকে বারবার প্রশ্নের মুখে ফেলার মতো বিষয়গুলি নিয়ে শরদ বরাবরই রাহুলের সঙ্গে ভিন্নমত পোষন করেছেন। এমনকি বিরোধী জোটের অনেকে মনে করেন, এনসিপির এই ভাঙন সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল ছিলেন শরদ। তা সত্ত্বেও আজ জোটের বার্তা দিতে এবং বড় দল হিসেবে উদারতা দেখাতেই শরদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে সাক্ষাৎ করেন রাহুল। আরও একটি বিষয় এ দিন মনে করিয়েছেন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকে। ২৪ বছর আগে সনিয়া গান্ধীর প্রতি কার্যত অনাস্থা দেখিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে এনসিপি গড়েছিলেন শরদ পওয়ার। আজ গৃহযুদ্ধে দুর্বল হয়ে পড়া সেই পওয়ারকে পাশে থাকার বার্তা দিতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সনিয়া-পুত্র রাহুল।
ভাঙা দলকে গোছানোর লক্ষ্য নিয়ে তিন দিন পরে আবার দিল্লিতে আসবেন বলে আজ জানিয়েছেন শরদ। অজিত গোষ্ঠী দলের কর্তৃত্ব তাঁদের হাতে রয়েছে বলে দাবি করলেও আজ শরদ জানিয়ে দেন, তিনি এখনও দলের সভাপতি। শরদের কথায়, ‘‘যে যা বলুক, আমিই দলের সভাপতি।’’ দলের প্রকৃত নেতা কে, এ নিয়ে যে বিতর্কের মীমাংসার ভার নির্বাচন কমিশনের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন শরদ। তিনি বলেন, ‘‘এর পরে যা বলার, তা নির্বাচন কমিশনেই বলব আমরা। আমাদের পক্ষ থেকে দলের নাম ও নিশানের জন্য কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ গত কাল ৮২ বছরের শরদকে বাণপ্রস্থে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন অজিত। জবাবে আজ শরদ বলেন, ‘’৮২ হোক বা ৯২— প্রয়োজনে আবার দলকে গড়ে তুলব আমি।’’