নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত হলফনামা জমা দিল এসবিআই। — ফাইল চিত্র।
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই) দেওয়া নির্বাচনী বন্ড তথ্যে কী আছে, কোন রাজনৈতিক দল কত টাকা পেয়েছে, তা নিয়ে কৌতূহল শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরই মঙ্গলবার নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দিয়েছে এসবিআই। বুধবার সেই সংক্রান্ত হলফনামা আদালতে জমা দেয় এসবিআই। সেই হলফনামায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে মোট ২২ হাজার ২১৭টি নির্বাচনী বন্ড কেনা হয়েছে। তার মধ্যে ২২ হাজার ৩০টি বন্ডই ভাঙিয়ে নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি! বাকি নির্বাচনী বন্ডগুলির ভাঙানো না হওয়ায় সেগুলি প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে জমা পড়েছে।
লোকসভা ভোটের আগে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে। সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচনী বন্ড মামলায় জোর ধাক্কা খেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থাকে ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘ক্ষতিকারক’ আখ্যা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
আদালত এসবিআইকে নির্দেশ দিয়েছিল, অবিলম্বে যেন ওই বন্ড দেওয়া বন্ধ করে তারা। এর পাশাপাশি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান পেয়েছে, কারা তাদের অনুদান দিয়েছে, তা প্রকাশ্যে আনার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। ৬ মার্চের মধ্যে এসবিআইকে সেই তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছিল।
তবে এই নির্দেশ কার্যকর করতে এসবিআই সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন জানায়। সোমবার সেই মামলায় এসবিআইয়ের আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাঙ্কের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন ছিল, “গত ২৬ দিন ধরে আপনারা কী করছিলেন? আপনাদের আবেদনে এই নিয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।” শীর্ষ আদালত জানায়, কোনও ভাবে আর অতিরিক্ত সময় দেওয়া যাবে না। সেই নির্দেশের পরই মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচনী বন্ডের যাবতীয় তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেয় এসবিআই।
প্রসঙ্গত, ভোটে কালো টাকার খেলা বন্ধ করার কথা বলে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৮ সালে প্রয়াত অরুণ জেটলি নির্বাচনী বন্ডের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ২০১৭-র অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে মোদী সরকার ২০১৮ থেকে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল। এর ফলে কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে চাইলে, বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দিতে হবে। এক হাজার, ১০ হাজার, এক লক্ষ, ১০ লক্ষ এবং এক কোটি টাকা মূল্যের বন্ড পাওয়া যাবে। রাজনৈতিক দলগুলি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নিতে পারবে। যদি কোনও দল তা না ভাঙায় তবে সে টাকা প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে জমা পড়বে। কিন্তু কে, কত টাকা দিচ্ছেন তা বোঝা যাবে না। তার পরই এই নির্বাচনী বন্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে।