শচীন পাইলট এবং অশোক গহলৌতের দ্বন্দ্বের জেরে রাজস্থান কংগ্রেসে ভাঙনের আশঙ্কা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজস্থানের কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধেই প্রতীকী অনশনে বসলেন ‘রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ’ নেতা শচীন পাইলট। তাঁর অভিযোগ, পূর্বতন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের জমানায় ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলি আড়াল করার চেষ্টা করছেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের সরকার।
মঙ্গলবার সকালে জয়পুরের ‘শহিদ সম্পর্কস্থলে’ প্রতীকী অনশন শুরু করেন রাজস্থানের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পাইলট এবং তাঁর অনুগামীরা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মঞ্চ বা কর্মসূচি স্থলের কোথাও কংগ্রেসের পতাকা বা প্রতীকচিহ্ন দেখা যায়নি। এই ঘটনাকে পাইলটের ‘কংগ্রেস ছাড়ার পূর্বাভাস’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
রাজস্থানের ভারপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা সুখজিন্দর সিংহ রণধাওয়া সোমবার বলেছিলেন, ‘‘রাজস্থানে নিজেদের সরকারের বিরুদ্ধে অনশনে বসছেন পাইলট। তাঁর এই পদক্ষেপ দলবিরোধী।’’ মঙ্গলবার তার জবাবে পাইলট বলেন, ‘‘বিজেপি সরকারের আমলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তুলেছি আমি। কী ভাবে তা ‘দলবিরোধী পদক্ষেপ’ হতে পারে? কেন বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতি পালন করছে না? কেন তদন্তে গড়িমসি করা হচ্ছে?’’
পাশাপাশি পাইলট শিবিরের তরফে মঙ্গলবার দাবি তোলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বরে গহলৌত-ঘনিষ্ঠ যে ৮২ জন বিধায়ক শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন, তাঁদের শাস্তি দেওয়া হোক। প্রসঙ্গত, গত অক্টোবরে ছিল কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন। সভাপতি হওয়ার দৌড়ে তখন গহলৌতকে এগিয়ে দিয়েছিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তিনি সভাপতি হলে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে পারেন প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী পাইলট, এ রকমই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সে সময়ই গহলৌত অনুগামী ৮২ জন বিধায়ক বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। শেষ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ হাইকমান্ড সভাপতি হওয়ার দৌড় থেকে সরিয়ে দিয়েছিল গহলৌতকে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে গহলৌত সরকারের বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থান’ চালাতে গিয়ে ‘ব্যর্থ’ হয়েছিলেন পাইলট। সে সময় রাজস্থানের তৎকালীন উপ মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তাঁর অনুগামী ১৯ জন বিধায়ককে নিয়ে দিল্লির কাছে একটি রিসর্টে গিয়ে উঠেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রত্যাশী পাইলটের এই পদক্ষেপে কংগ্রেসের অন্দরে আশঙ্কা তৈরি হয় যে, বিজেপির সহায়তায় তিনিও রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার ফেলে দিতে পারেন। তবে কিছু দিন পরেই বিদ্রোহে ইতি টানেন রাজেশ পাইলটের পুত্র। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ খোয়াতে হয়েছিল তাঁকে। চলতি বছরের শেষেই রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু সেখানে কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটার ইঙ্গিত নেই। বরং মুখ্যমন্ত্রী গহলৌত এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পাইলট ধারাবাহিক ভাবে পরস্পরকে নিশানা করে চলেছেন।