বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।
ইন্ডিয়া না ভারত— এ নিয়ে বিতর্কে এ বার আসরে নামলেন খোদ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, যিনি কূটনৈতিক কর্তা হিসাবে গোটা কর্মজীবনে বিশ্বের কাছে ভারতকে তুলে ধরেছেন ‘ইন্ডিয়া’ বলেই। মোদী সরকারের বিদেশমন্ত্রী আজ যুক্তি দিয়েছেন, “আমাদের সংবিধানে লেখা রয়েছে, ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারত। সবাইকে এটি পড়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”
সম্প্রতি জি২০-র নৈশভোজের আমন্ত্রণে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’-র বদলে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ লেখা হয়েছে। তার পরে প্রধানমন্ত্রীর ইন্দোনেশিয়া সফরের নথিতে ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’, জি২০ সম্মেলনের প্রতিনিধিদের পরিচয়পত্রেও ইংরেজিতে ‘ভারত’ লেখা হয়। তাতেই প্রশ্ন উঠেছিল, বিরোধীরা নিজেদের জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ রেখেছে বলে মোদী সরকার কি এখন থেকে দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’র বদলে ‘ভারত’ ব্যবহার করবে? আজ জয়শঙ্কর যুক্তি দেন, ‘‘যখনই আপনি ভারত বলবেন, এমন একটি অর্থ এবং ব্যঞ্জনা তৈরি হবে যা আমাদের সংবিধানেও প্রতিফলিত হয়।”
জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ ঘোষণার পরেই হিমন্তবিশ্ব শর্মারা ভারত লেখা শুরু করেছিলেন। সেই ঢেউ তার পরে থিতিয়েছিল। তিন দিন আগে আরএসএসের সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত ইন্ডিয়ার বদলে ভারত শব্দটি ব্যবহারের কথা বলেন।
দৃশ্যত তার পর থেকেই এই সব ফের শুরু হয়েছে। তবে মোদী সরকারের অন্দরমহলে খবর, এ নিয়ে কোনও রকম সংবিধান সংশোধনের কথা ভাবছে না সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ইন্ডিয়া-ভারত নিয়ে অনাবশ্যক মন্তব্য করতে বারণও করেছেন। বস্তুত ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টে ইন্ডিয়ার বদলে ভারত নাম চেয়ে যখন একটি জনস্বার্থ মামলা হয়, তখন মোদী সরকারই বলেছিল, নাম বদলের দরকার নেই। সুপ্রিম কোর্টও রায় দেয়, ইন্ডিয়া বা ভারত, যাঁর যেটা খুশি সেই নামই ব্যবহার করতে পারবেন। আজ জয়শঙ্করের কথার উত্তরে কংগ্রেস সূত্রের দাবি, সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে, ‘ইন্ডিয়া, দ্যাট ইজ় ভারত, শ্যাল বি ইউনিয়ন অব স্টেটস’। সেই সংবিধান সংশোধনের জন্য সরকারের লোকসভা ও রাজ্যসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। লোকসভায় ৫৪৩ জনের মধ্যে ৩১৬ জন সাংসদ, রাজ্যসভায় ১১৬ জনের সমর্থন প্রয়োজন। সেই সংখ্যা সরকারের কাছে নেই। সরকার এ সব নিয়ে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক খাড়া করছে।
কেন? তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “ইন্ডিয়া বনাম ভারত বিতর্ক আসলে বিজেপির নজর ঘোরানোর প্রয়াস। সময় নষ্ট না করে এখনই সরকারকে আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, একচেটিয়া মুদ্রাস্ফীতি, সাম্প্রদায়িক অশান্তি, বেকারত্ব, সীমান্ত সংঘাত, জাতীয়তাবাদ আর ডাবল ইঞ্জিন নিয়ে ফাঁকা বুলি আওড়ানোর জন্য চেপে ধরা উচিত।” কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আসলে আতঙ্কিত। উনি সর্বাধিক ক্লান্তি, সর্বাধিক আতঙ্কে ভুগছেন। সব কাজে তা প্রমাণিত। বেঙ্গালুরুতে বিরোধীদের বৈঠকের সময় মৃত এনডিএ-র বৈঠক ডাকা, ‘ইন্ডিয়া’ তৈরির পর তাকে আক্রমণ করা, মুম্বইতে বৈঠকের সময় সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা— সবই ভয় পাওয়ার প্রমাণ।’’
আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘‘বিজেপি এত ঘাবড়াচ্ছে কেন? ১৯ জুলাই ইন্ডিয়া তৈরির আগে পর্যন্ত বিজেপির মুখে ইন্ডিয়া, ভারত নিয়ে একটা শব্দও তো শুনিনি। কিন্তু ঘাবড়ে গিয়ে কীই কেড়ে নিতে পারবেন আপনারা? কারণ আমাদের স্লোগান, জিতেগা ভারত, জিতেগা ইন্ডিয়া।”
বিজেপির ইন্ডিয়া নামে আপত্তি দেখে কংগ্রেসের সাংসদ শশী তারুর মনে করিয়েছেন, পাকিস্তানের জনক মহম্মদ আলি জিন্নাও ‘ইন্ডিয়া’ নামের বিরোধিতা করেছিলেন। শশী বলেন, ‘‘জিন্না ইন্ডিয়া নামটির বিরোধ করেছিলেন। কারণ, ‘ইন্ডিয়া’ নামকরণ বোঝাচ্ছে ব্রিটিশ রাজের থেকে আমরা ক্ষমতা হাতে নিয়েছি। পাকিস্তান নিজেরা সরে গিয়ে রাষ্ট্র তৈরি করেছে। সিএএ-র মতোই বিজেপি সরকার জিন্নার মতকেই সমর্থন করে চলেছে।” বিএসপি নেত্রী মায়াবতী আবার দু’পক্ষকেই খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘‘এটা একটা ষড়যন্ত্র। নজর ঘোরানোর খেলা। এনডিএ-র উচিত ছিল, সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে বলা এই রকম নামকরণের অধিকার কারও নেই।’’