— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সেপ্টেম্বর ২০০৭। এক চিকিৎসককে মাদক খাইয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল দিল্লির এক নামী হাসপাতালে। সম্প্রতি কলকাতার আরজি কর-কাণ্ড মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৭ বছর আগের সেই রাত।
পঞ্জাব থেকে অনেক উচ্চাশা নিয়ে দিল্লি এসেছিলেন ওই তরুণী চিকিৎসক। দিল্লির জনকপুরীতে বোনের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন তিনি। শিশু-চিকিৎসক হিসাবে কাজ নিয়েছিলেন পশ্চিম দিল্লির এক হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরের সেই রাতেও রোজকার মতো ওয়ার্ডে কাজ করছিলেন তিনি। সে রাতে আর বাড়ি ফেরেননি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর হাসপাতাল চত্বরেই অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। সারা গায়ে ছিল অসংখ্য কামড় ও আঘাতের চিহ্ন।
২৬ বছরের ওই চিকিৎসককেও ধর্ষণ করা হয়েছিল হাসপাতাল চত্বরেই। যখন তাঁকে পাওয়া যায়, তাঁর হাতে ছিল ইঞ্জেকশনের চিহ্ন। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, মাদক খাইয়ে কিংবা মাদকের ইঞ্জেকশন দিয়ে অচৈতন্য করে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছিল বছর ছাব্বিশের ওই চিকিৎসককে। আর জ্ঞান ফেরানো যায়নি তাঁর। কোমায় চলে গিয়েছিলেন। সেই রাতের পর থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সাত মাস কোমাতেই ছিলেন তিনি। সে সময়েও দেশ জুড়ে শুরু হয়েছিল প্রতিবাদ। ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল দিল্লি। কিন্তু ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার আজও অধরাই।
ঘটনার পর তাঁর চিকিৎসার সমস্ত ব্যায়ভার বহনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। দোষীর খোঁজে শুরু হয়েছিল তদন্ত। তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষায় কারচুপির অভিযোগে প্রথমেই গ্রেফতার করা হয় ওই হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল অফিসারকে। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু সাক্ষ্য ও উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তদন্ত বেশি দূর এগোয়নি। আজও ধরা যায়নি ধর্ষককে। আরজি কর-কাণ্ডের আবহ মনে করিয়ে দিচ্ছে দিল্লির চিকিৎসকের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার কথা।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চারতলায় সেমিনার হলে এক চিকিৎসকের রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে সে দিন রাতেই সন্দেহভাজন এক যুবককে লালবাজারে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আরজি কর-কাণ্ডে ধৃত পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার। এলাকাতেও মহিলাদের উত্ত্যক্ত করা, তোলাবাজি ইত্যাদি নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর নামে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশ। প্রশ্ন উঠেছে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে।