দিল্লির কর্তব্যপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রথম বার দেখা গেল অনেক কিছুই। ছবি: সংগৃহীত।
মিশরের প্রেসিডেন্ট থেকে মহিলা সেনার মোটরবাইকে কলাকৌশল। দেশি কামানের তোপধ্বনি থেকে বিএসএফের মহিলা উটবাহিনী, মায় নাম বদলে হওয়া কর্তব্যপথও। ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির অনেক কিছুই দেখা গেল প্রথম বার। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল ভারতীয় নৌসেনার বিমান ইল্যুশিন আইএল-৩৮।
ষাটের দশকে সোভিয়েত জমানায় তৈরি এই বিমান প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে ভারতীয় নৌসেনায় কর্মরত। কিন্তু এই প্রথম বার প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে দেখা গেল। সেই সঙ্গে শেষ বারের মতোও। কারণ, সমুদ্রে নজরদারি এবং ডুবোজাহাজ ধ্বংসে পারদর্শী সোভিয়েত যুগের এই বিমানকে এ বার অবসরে পাঠাতে চলেছে ভারতীয় নৌসেনা।
এ বারই প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ কর্মসূচির প্রধান অতিথির আসনে দেখা গেল মিশরের কোনও রাষ্ট্রপ্রধানকে। সে দেশের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ্ এল-সিসির সঙ্গে এসেছে সেনাবাহিনীর একটি দলও। তারা অংশ নেয় কর্তব্যপথের কুচকাওয়াজে। প্রসঙ্গত, গত বছর স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের সূচনায় লাল কেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, কর্তব্যপথই জীবনের পথ হওয়া উচিত। এর পর দিল্লির রাইসিনা হিলসের উপরে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত যে রাস্তার নাম রাজপথ, তা বদলে ‘কর্তব্যপথ’ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। নতুন নামকরণের পর এই প্রথম বার প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ হল সেই পথে।
এ বারই প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ছিল শুধু দেশে তৈরি অস্ত্র। পাশাপাশি ছিল নারীশক্তির প্রদর্শন। গত বছরের স্বাধীনতা দিবসে অমৃত মহোৎসবের সূচনায় ব্রিটিশ জমানার ২৫ পাউন্ডার কামানের বদলে তোপধ্বনিতে ব্যবহার করা হয়েছিল ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উন্নয়ন সংস্থা (‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ বা ডিআরডিও)-র তৈরি ১৫৫ মিলিমিটারের ‘অ্যাডভান্সড টাওড আর্টিলারি গান সিস্টেম’ (এটিএজিএস)। এ বার প্রজাতন্ত্র দিবসের ২১ তোপধ্বনি থেকে সরছে ২৫ পাউন্ডার। বদলে আসছে আশির দশকে দেশে তৈরি ১০৫ মিলিমিটার কামান।
প্রজাতন্ত্র দিবসের রাজপথে ফি বছর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে চলন্ত মোটরবাইকে সেনার কলাকৌশল। এ বারে মোটরবাইকে ওই কলাকৌশল দেখানোর দায়িত্ব পেয়েছিলেন সিগন্যাল কোরের অফিসার লেফটেন্যান্ট ডিম্পল। সেনা পরিবারের মেয়ে ডিম্পলের দাদু মেজর শয়তান সিংহ ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধে লাদাখের রেজিং লা এলাকায় বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে চিন সেনার অগ্রগতি অনেকাংশে রুখে দিয়েছিলেন। যুদ্ধে শত্রু সেনার হামলায় শেষ পর্যন্ত নিহত হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে মরণোত্তর সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান পরমবীর চক্র দেওয়া হয়েছিল।
এ বারের কুচকাওয়াজেই প্রথম বার বিএসএফের মহিলা উটবাহিনী অংশ নিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে রাজস্থান সীমান্তে পাহারার জন্য বিএসএফ প্রথম মহিলা উটবাহিনী গঠন করেছিল। কুচকাওয়াজে যোগ দিতে চলা উটবাহিনীর ১২ সদস্য গুজরাত, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা। মহিলাদের ক্ষমতায়নের বার্তা দিতেই এ বারের মহিলা উটবাহিনীকে বেছে নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে বিএসএফ।