বাঁ দিক থেকে, গহলৌত, পাইলট, খড়্গে এবং রাহুল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
চলতি বছরের শেষে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। তার আগে ওই রাজ্যগুলিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে সক্রিয় হতে হল কংগ্রেস হাইকমান্ডকে। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ছত্তীসগঢ়ের পরে এ বার রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গেদের ‘নজরে’ রাজস্থান। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাজস্থানের ‘বিক্ষুদ্ধ’ নেতা সচিন পাইলট বৃহস্পতিবার ছত্তীসগঢ়ের নয়া উপমুখ্যমন্ত্রী টিএস সিংহদেওকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বুধবার দিল্লিতে রাহুল-খড়্গের উপস্থিতিতে সে ছত্তীসগঢ়ের নতুন উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সিংহদেওকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দিল্লিতে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বঘেল, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মোহন মকরাম এবং সিংহদেও-সহ সে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে এআইসিসির তরফে জানানো হয়েছে। বর্তমানে বঘেল মন্ত্রিসভার সদস্য সিংহদেও দীর্ঘ দিন ছত্তীসগঢ়ের বিরোধী দলনেতা ছিলেন। ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পর এই রাজপুত নেতা মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠেছিলেন।
श्री टी. एस. सिंह देव जी को छत्तीसगढ़ का उप मुख्यमंत्री बनाए जाने पर हार्दिक बधाई एवं शुभकामनाएं।@TS_SinghDeo pic.twitter.com/lSbnD3GJ9j
— Sachin Pilot (@SachinPilot) June 28, 2023
কংগ্রেসের একটি সূত্রের দাবি, শেষ পর্যন্ত তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি রাহুলের হস্তক্ষেপে মুখ্যমন্ত্রী হন অনগ্রসর (ওবিসি) নেতা বঘেল। সে সময় ঠিক হয়েছিল বঘেল আড়াই বছর পরে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন। কিন্তু পরে সেই শর্ত মানতে চাননি বঘেল। যদিও বৃহস্পতিবার সিংহদেও বলেন, ‘‘আড়াই বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগির কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’ গত দু’বছর ধরেই ছত্তীসগঢ় কংগ্রেসে দুই নেতার গোষ্ঠীলড়াই চলছিল। সরগুজার রাজ পরিবারের সন্তান সিংহদেও কংগ্রেস ছাড়তে পারেন বলেও জল্পনা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সিংহদেও সে জল্পনায় জল ঢেলে বলেছেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে ছত্তীসগঢ়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়বে কংগ্রেস।’’
২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটের পরে মধ্যপ্রদেশে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াও একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি তোলায় সঙ্কট ঘনিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দল ছাড়েন গ্বালিয়র রাজ পরিবারের উত্তরাধিকারী জ্যোতিরাদিত্য। অনুগামী বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে পতন ঘটান কমল নাথের সরকারের। সে বারের বিধানসভা ভোটের পরে রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার হয়ে ওঠা সচিন পাইলটকে নিয়ে এখনও সমস্যা চলছে। পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আগে তাই এ বার রাহুল নিজেই সক্রিয় হয়েছেন বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।
২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের সরকারের বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থান’ চালাতে গিয়ে ‘ব্যর্থ’ হয়েছিলেন পাইলট। সে সময় রাজস্থানের তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তাঁর অনুগামী ১৯ জন বিধায়ককে নিয়ে দিল্লির কাছে একটি রিসর্টে গিয়ে উঠেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রত্যাশী পাইলটের এই পদক্ষেপে কংগ্রেসের অন্দরে আশঙ্কা তৈরি হয় যে, বিজেপির সহায়তায় তিনিও রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার ফেলে দিতে পারেন। তবে কিছু দিন পরেই বিদ্রোহে ইতি টানেন প্রয়াত রাজেশ পাইলটের পুত্র। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং উপ মুখ্যমন্ত্রীর পদ খোয়াতে হয়েছিল তাঁকে।
এর পর গত ৩ বছর ধরেই পাইলট রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাইছেন। গত অক্টোবরে ‘লক্ষ্যের’ কাছেও পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় ছিল কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন। প্রাথমিক ভাবে সভাপতি হওয়ার দৌড়ে তখন গহলৌতকে এগিয়ে দিয়েছিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তিনি সভাপতি হলে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে পারেন পাইলট, এ রকমই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সে সময়ই গহলৌত অনুগামী ৮২ জন বিধায়ক বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। শেষ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ হাইকমান্ড সভাপতি হওয়ার দৌড় থেকে সরিয়ে দিয়েছিল গহলৌতকে। কিন্তু পাইলটের ‘ভাগ্য’ ফেরেনি।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, ভোটের মাত্র ৬ মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী পদে রদবদল করে পঞ্জাবের ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চাইছেন না রাহুল-খড়্গেরা। বিজেপি যখন মোদীর ওবিসি পরিচিতিকে রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগাচ্ছে, তখন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ওবিসি নেতা গহলৌতকেও সরাতে চায় না কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে তাঁরা পরিস্থিতি সামাল দেন, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে কংগ্রেসের অন্দরে।