—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গুরুতর পথ দুর্ঘটনার পরে প্রথম এক ঘণ্টা ‘গোল্ডেন আওয়ার’, অর্থাৎ জীবনদায়ী চিকিৎসার জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে ধরা হয়। দুর্ঘটনার পরে ওই এক ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রকে একটি প্রকল্প আনার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। তামিলনাড়ুর কোয়ম্বত্তূরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের অস্থিশল্য বিভাগের প্রধান চিকিৎসকের দাখিল করা একটি রিট পিটিশনের শুনানিতে বুধবার এই নির্দেশ দেয় বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহর বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আগামী ১৪ মার্চের মধ্যে কেন্দ্রকে এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
বিচারপতিরা জানান, দুর্ঘটনার পরে প্রথম এক ঘণ্টায় আহত ব্যক্তিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে বাধ্য কেন্দ্র। মোটর ভেহিকল্স আইনের ১৬২ ধারা অনুসারে ওই সময়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে একটি প্রকল্পও থাকতে হবে। শীর্ষ আদালত তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, সেন্ট্রাল মোটর ভেহিকলস (মোটর ভেহিকল অ্যাক্সিডেন্ট ফান্ড) রুলস, ২০২২ কোনও কাজেরই নয় যতক্ষণ না সেটির ১৬২ নম্বর ধারার দ্বিতীয় উপধারা অনুযায়ী কেন্দ্র প্রকল্প তৈরি করছে। ওই উপধারায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী এক ঘণ্টায় বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রকে প্রকল্প তৈরি করতে এবং প্রয়োজনে তার জন্য তহবিল গড়তে দায়বদ্ধ করা হয়েছে। তহবিল তৈরি হলেও প্রকল্পের অস্তিত্ব এখনও নেই বলে জানিয়েছে আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, বহু ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনাগ্রস্তদের চিকিৎসা শুরুর আগে পুলিশের পৌঁছনোর জন্য অপেক্ষা করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসার খরচও তুলনামূলক বেশি। সে সব ক্ষেত্রে আহতের পরিবারের থেকে চিকিৎসার খরচ পাওয়া নিয়ে চিন্তায় থাকেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে চিকিৎসায় অহেতুক দেরি হয়। এই সব কারণেই প্রকল্পটির প্রয়োজন রয়েছে।
আদালত তাদের নির্দেশে জানিয়েছে, আইনের ধারা অনুসারে এই ধরনের একটি প্রকল্প চালু করার জন্য কেন্দ্রের হাতে অনেক সময় ছিল। এই প্রকল্প এক বার চালু হয়ে গেলে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচবে। অনেকেই আছেন যাঁরা প্রথম এক ঘণ্টায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান। তার পরেই বিচারপতিরা প্রকল্প তৈরির জন্য ১৪ মার্চের পরে কেন্দ্রকে আর বাড়তি সময় দেওয়া হবে না বলে জানান। আদালত বলেছে, ২১ মার্চের মধ্যে প্রকল্পের প্রতিলিপি আদালতে নথিভুক্ত করতে হবে। সঙ্গে একটি হলফনামায় সড়ক পরিবহণ এবং হাইওয়েজ় মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে ব্যাখ্যা করতে হবে, কোন পদ্ধতিতে প্রকল্পটি কার্যকর করা হবে। পরবর্তী শুনানি ২৪ মার্চ।
২০২৪ সালের ৫ এপ্রিল কেন্দ্র এই সংক্রান্ত প্রকল্প-প্রস্তাবনার খসড়া জমা করেছিল। যাতে দুর্ঘটনার পরের সাত দিনের মেয়াদে সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তাতে আপত্তি তুলে আবেদনকারীর কৌঁসুলি বলেছিলেন, ওই টাকার অঙ্ক ও সাত দিনের সময় এমন ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। সেই বিষয় দু’টি প্রকল্প তৈরির সময় মাথায় রাখতে বলেছে শীর্ষ আদালত।