Bangladesh Crisis

বাংলাদেশের ঘটনায় পাক সংযোগ? কী হবে ভারতের বিদেশনীতি? সর্বদল বৈঠকে জয়শঙ্করকে তিন রাহুল-প্রশ্ন

মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সব দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। বৈঠকে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু প্রমুখ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৪ ১৩:৫৯

ছবি: পিটিআই।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দিকে তিন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। সরাসরি প্রশ্ন করলেন, গোটা ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না। এই পরিস্থিতিতে কী হতে চলেছে ভারতের বিদেশনীতি, তা-ও জানতে চাইলেন কংগ্রেস সাংসদ।

Advertisement

মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সব দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। বৈঠকে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু প্রমুখ। সেখানেই রাহুল সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, গত সপ্তাহে বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবনমন এবং তার ফলস্বরূপ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির যে প্রহসন, এর সঙ্গে বিদেশি শক্তিগুলি, বিশেষত পাকিস্তানের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না। জয়শঙ্কর উত্তর দেন, বিষয়টি এখনও তদন্তসাপেক্ষ। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের কাছে এই মর্মে তথ্য রয়েছে যে, বাংলাদেশে টালমাটাল পরিস্থিতি চলাকালীন একাধিক বার সমাজমাধ্যমে প্রোফাইলের ছবি বদলেছেন জনৈক পাক কূটনীতিক। এটি কোনও বড় যোগসূত্রের দিকে ইঙ্গিত করে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখবে কেন্দ্র।

সর্বদল বৈঠকে রাহুল আরও জানতে চান, ঢাকায় ক্ষমতার পালাবদলের যে কূটনৈতিক প্রভাব ভারতের উপর পড়তে চলেছে, তার মোকাবিলায় আগামী দিনে কী কী দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ করবে সরকার। জয়শঙ্কর জবাবে জানান, কেন্দ্র এখনও সব দিক খতিয়ে দেখছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছে নয়াদিল্লি। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র।

রাহুলের তৃতীয় প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের পরিস্থিতির নাটকীয় পট পরিবর্তন নিয়ে নয়াদিল্লির কাছে কোনও পূর্বাভাস ছিল কি না। এর সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন জয়শঙ্কর। আরও এক বার বলেছেন, ভারত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত জানাবেন তাঁরা।

বাংলাদেশে প্রবাসী ভারতীয়দের পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই কেন্দ্রের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। তবে এখনই জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয়দের সরিয়ে আনা হচ্ছে না। প্রয়োজনে যে কোনও সময়ে সেই মর্মে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। সর্বদল বৈঠকে সাংসদদের জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘‘যে পরিস্থিতি বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে, তার দিকে আমরা নজর রাখছি। সঠিক সময় এলে ভারত সরকার সঠিক পদক্ষেপ করবে।’’ আপাতত হাসিনাকে কিছু দিন সময় দিতে চায় ভারত। সূত্রের খবর, হাসিনা লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে চান। কিন্তু ব্রিটেন থেকে এখনও মেলেনি সবুজ সঙ্কেত। অন্য কোনও দেশে তিনি যাবেন কি না, চলছে সেই ভাবনাচিন্তা। হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, তা জানার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে নয়াদিল্লি।

তবে মঙ্গলবারের বৈঠকে রাহুল ছাড়া বাকি সকলের গলাতেই ছিল এক সুর। একমাত্র তিনিই কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্ন করেছেন। বিরোধী পক্ষের বাকি শরিকেরা আগেই জানিয়েছিলেন, কেন্দ্র যা বলবে, সেই পথেই হাঁটবেন তাঁরা। একই কথা সোমবার বলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ঘটনাচক্রে, পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের একেবারে পাশের রাজ্য। বাংলাদেশের সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘতম সীমানা। তবে সূত্রের খবর, রাহুলের এমন সরাসরি প্রশ্নের জন্য তৈরি ছিলেন না বিরোধীরাও। বৈঠকের পর বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার এক নেতা বলেন, ‘‘রাহুল যে এমন তীক্ষ্ণ প্রশ্ন ছুড়ে দেবেন, তা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল।’’

হাসিনার ইস্তফার পরে আপাতত বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়েছে সে দেশের সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান সোমবারেই জানিয়েছেন, দ্রুত একটি অন্তর্বর্তী তদারকি সরকার গঠন করা হবে। ওই দিন রাতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাঁরা জানান, রাষ্ট্রপতি তাঁদের বলেছেন, তিন মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন করে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করার লক্ষ্যে এগোনো হচ্ছে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে সোমবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে আয়োজিত ওই বৈঠকেও হাজির ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী। ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের মুখ্যসচিব পিকে মিশ্র, ‘র’-এর প্রধান রবি সিংহ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের ডিরেক্টর তপন ডেকা। মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকেন জয়শঙ্কর।

Advertisement
আরও পড়ুন