— ফাইল চিত্র।
সরকার বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তাল বাংলাদেশ। পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশে শান্তি ফেরানোর চেষ্টায় রয়েছে সেনা। এর মধ্যেই বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘শান্ত থাকুন। উস্কানিমূলক কথা ছড়াবেন না।’’ জানালেন, বাংলাদেশ নিয়ে কেন্দ্র যা বলবে, তা-ই করবে রাজ্য।
সোমবার বিধানসভায় থাকাকালীনই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আগরতলায় নেমে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার খবর পেয়েছেন মমতা। এর পরেই মুখ্যসচিব বিপি গোপালিক ও রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী। আলোচনা শেষে বেরোনোর সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘দেশে যে সরকার আছে তাদের উপর ছেড়ে দিন। আপনারা নিজেরা এমন কোনও মন্তব্য করবেন না যাতে কোনও হিংসা বা প্রতিরোধ শুরু হতে পারে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন, কিন্তু সেটা নিয়ে এমন কিছু লিখবেন না বা বলবেন না যাতে বাংলা বা ভারতের শান্তি নষ্ট হয়। এটা আমার সবার কাছে অনুরোধ। বিশেষ করে বিজেপি নেতাদের বলছি, কারণ আপনারা ইতিমধ্যেই নানা কিছু পোস্ট করছেন। যে পোস্টগুলো করা উচিত নয় বলেই আমি মনে করি। আমি আমাদের নেতাদেরও বলছি কেউ কোনও পোস্ট করবেন না।’’
সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এমনটাই নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। বৈঠকেও বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রীদের কোনও রকম মন্তব্য করতে বারণ করেছেন তিনি। সোমবার বিকালে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘‘আমরা তো বিস্তারিত জানি না। তাই বাংলায় সবাইকে শান্ত থাকতে বলব। কেউ যেন উত্তেজনা না ছড়ায়, কেউ যেন উত্তেজনায় পা না দেয়। এটা দুটো রাষ্ট্রের মধ্যে বিষয়। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন। ভারত সরকার নজর রাখছে, তারা যা বলবে, আমরা তা করব।’’
প্রসঙ্গত, জুলাইয়ের মাঝামাঝি বাংলাদেশে বিতর্কের সূত্রপাত হয় কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে। সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থায় আপত্তি তুলে রাস্তায় নেমেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। প্রসঙ্গত, জনরোষের মুখে পড়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিলেও ন’দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল আন্দোলনকারী ছাত্রদের যৌথ মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। কিন্তু বিগত কয়েক সপ্তাহে একের পর এক আন্দোলনকারীর মৃত্যুর পর ন’দফা দাবি নেমে আসে এক দফায়— হাসিনা সরকারের পদত্যাগ। রবিবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি ছিল ঢাকা-সহ গোটা দেশ জুড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ঢাকা-সহ সব শহরে কার্ফু জারি করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। বন্ধ রাখা হয়েছিল ইন্টারনেট। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি। কার্ফু সত্ত্বেও সোমবার ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় কার্ফু ভেঙে জড়ো হন হাজারে হাজারে মানুষ। আন্দোলনকারীদের জমায়েতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। কাঁদানে গ্যাসও ছোড়া হয়। কিন্তু তাতেও দমানো যায়নি আন্দোলন। পরে শোনা যায়, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেনাপ্রধান। এর পর পরই হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রকাশ্যে আসে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরেই বাংলাদেশের রাস্তায় নেমে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। হাসিনার বাসভবন ‘গণভবন’-এ ঢুকে পড়েছে বিজয় মিছিল। রাস্তায় রাস্তায় চলছে জনতার উল্লাস।
এই পরিস্থিতিতে বাংলা তথা ভারতের নেতা, মন্ত্রী ও সাধারণ মানুষের কাছে প্ররোচনামূলক কথা না ছড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘সবার জন্য বলব, শান্তিরক্ষা করুন। ভারত একটা দেশ। বাংলাদেশও একটা দেশ। কিন্তু যদি পাশের রাজ্যে যদি কিছু হয়, প্রতিবেশীর যদি কিছু হয়, তার একটা প্রভাব পাশের রাজ্যে পড়ে। সে ক্ষেত্রে শান্ত থেকে আমাদের পরিস্থিতি দেখে রাখতে হবে।’’