Probe against Maharashtra IAS

খারিজ হল জামিনের আবেদনও! কী রয়েছে প্রাক্তন আইএএস পূজার ভাগ্যে?

বুধবারই বিতর্কিত আইএএস পূজা খেড়করের নিয়োগ বাতিল করে দিয়েছে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)। জানানো হয়েছে, আর কখনও ইউপিএসসি পরিচালিত কোনও পরীক্ষায় বসতে পারবেন না তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৪ ১৮:৫৯
বিতর্কিত পূজা খেড়কর।

বিতর্কিত পূজা খেড়কর। ছবি: এক্স।

বিতর্কিত প্রাক্তন আমলা পূজা খেড়করের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দিল দিল্লির আদালত। সিভিস সার্ভিস পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে তাঁর নামে। বৃহস্পতিবার আদালত জানিয়েছে, পূজা কেবল আইনের অপব্যবহারই করেননি, বরং সিস্টেমের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

Advertisement

আগে থেকেই জামিনের অগ্রিম আবেদন করে রেখেছিলেন পূজা। তাঁর আইনজীবীর যুক্তি ছিল, পূজাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে, যে কোনও সময় তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে। বুধবার অতিরিক্ত দায়রা বিচারক দেবেন্দ্রকুমার জাঙ্গালা পূজার আবেদনের যুক্তি শোনেন। শোনেন ইউপিএসসির আইনজীবীর সওয়ালও। এর পরেই বুধবার আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, এখনই সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন না তাঁরা। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে রায় ঘোষণা করা হতে পারে। কথা মতো এ বার সেই সিদ্ধান্তই জানাল আদালত।

বৃহস্পতিবার পূজার আইনজীবীর দাবি ছিল, এক উচ্চ আধিকারিকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনার পর থেকেই মিথ্যা ফাঁসানো হচ্ছে তাঁর মক্কেলকে। সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বিরোধী পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘‘এই ধরনের ব্যক্তিরা, যাঁরা সিস্টেমের সঙ্গে প্রতারণা করেন, তাঁদের বিষয়গুলি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা উচিত। পূজা আইনের অপব্যবহার করেছেন, ভবিষ্যতে আবারও এমন করতে পারেন।’’ পূজার নামে জালিয়াতি, প্রতারণা, আইটি আইন এবং প্রতিবন্ধী আইন সম্পর্কিত ধারায় মামলা দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ।

প্রসঙ্গত, বুধবারই বিতর্কিত আইএএস পূজা খেড়করের নিয়োগ বাতিল করে দিয়েছে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)। জানানো হয়েছে, আর কখনও ইউপিএসসি পরিচালিত কোনও পরীক্ষায় বসতে পারবেন না পূজা। আগেই একটি বিবৃতিতে ইউপিএসসি জানিয়েছিল, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন পূজা। সেই মতো গত ১৮ জুলাই তাঁকে শোকজ় নোটিসও পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে তাঁকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে কারণ দেখাতে বলা হয়েছিল, তাতে আগামী ৪ অগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন পূজা। কিন্তু সেই আবেদন নাকচ করে ইউপিএসসি ৩০ জুলাই, বুধবার পর্যন্ত সময় দিয়েছিল তাঁকে। জানানো হয়েছিল, পূজার কাছে এটিই শেষ সুযোগ। এর পর তাঁর কোনও উপরোধ-অনুরোধ আর শোনা হবে না। বুধবারের বিবৃতিতে ইউপিএসসি জানিয়েছে, বাড়তি সময় দেওয়া সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন পূজা। তাই ২০২২-এর আইএএস নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁর নির্বাচন বাতিল করা হল এবং আজীবনের জন্য তাঁকে বহিষ্কার করা হল।

প্রসঙ্গত, কয়েক সপ্তাহ আগে মহারাষ্ট্রের পুণের অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসাবে নিযুক্ত পূজার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়িতে মহারাষ্ট্র সরকারের স্টিকার, লালবাতি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলাশাসকের কক্ষ ‘দখল’ করা এবং জেলাশাসকের সহকারীর কাছে বেআইনি দাবিদাওয়া পেশ করে সেই দাবি পূরণের জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। সেখান থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। তার পর পূজার একের পর এক ‘কীর্তি’ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।

ক্রমে জানা যায়, ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগে এমবিবিএস পড়ার সময়ে ভুয়ো শংসাপত্র দাখিল করে নিজেকে ‘অনগ্রসর’ (ওবিসি) শ্রেণিভুক্ত বলে দেখিয়েছিলেন পূজা। ২০০৭ সালে মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়ে জাতিগত সংরক্ষণের সুবিধা নিতে ‘ওবিসি নোম্যাডিক ট্রাইব-৩’ ক্যাটেগরিতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি, যা শুধুমাত্র ‘বানজারি’ সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত থাকে। সংরক্ষণের সুবিধা পেতে ভুয়ো জাতিপরিচয়গত শংসাপত্রের পর এ বার ভুয়ো প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের আবেদন করেন তিনি! দু’বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় সেই ভুয়ো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমাও দেন— এক বার দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কথা উল্লেখ করে, আর এক বার মানসিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে। তবে নিয়োগের আগে ২০২২ সালে এমস-এ প্রতিবন্ধকতার পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হলেও ছ’বার নানা অজুহাতে পূজা তা এড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এত গলদ সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে চাকরি পেলেন, তা নিয়েই উঠেছিল প্রশ্ন।

Advertisement
আরও পড়ুন