Tripura Cricket association

ত্রিপুরা ক্রিকেটে ধুন্ধুমার, বেরোল পিস্তল, ক্রীড়ামন্ত্রী জানলেন আনন্দবাজার অনলাইনের ফোন পেয়ে

শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনার কথা জানতেন না ত্রিপুরার ক্রীড়ামন্ত্রী টিঙ্কু রায়। তিনি আপাতত দিল্লিতে। ত্রিপুরার ঘটনা নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্ন শুনে সরাসরি বলেন, ‘‘আপনাদের থেকেই প্রথম জানলাম!’’

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩ ১৯:২০
Power tussle in Tripura Cricket association

ত্রিপুরা ক্রিকেট সংস্থার কোন্দলে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ তরুণ। ছবি: সংগৃহীত।

ত্রিপুরার রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার দখলদারি নিয়ে গোষ্ঠীকোন্দল তুঙ্গে পৌঁছল শনিবার। পরিস্থিতি এমনই, যেখানে আগ্নেয়াস্ত্র পর্যন্ত বেরিয়ে পড়ল। যা নিয়ে তীব্র অস্বস্তিতে ত্রিপুরা সরকার তথা শাসকদল বিজেপি। ঘটনাচক্রে, বাংলা এবং ভারতের হয়ে খেলা ক্রিকেটার ঋদ্ধিমান সাহা এখন ত্রিপুরার হয়ে খেলেন। তেমনই বাংলার আর এক প্রাক্তন ক্রিকেটার সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ও ত্রিপুরা দলে রয়েছেন।

অভিযোগ, শনিবার ত্রিপুরা ক্রিকেট সংস্থার দফতরে একদল ছেলে ঢুকে পড়ে ভিতর থেকে দরজা আটকে দেন। তাঁদের দাবি কী? জানা গিয়েছে, সহ-সভাপতি তিমির চন্দ এবং সম্পাদক তাপস ঘোষকে তাঁরা ঢুকতে দেবেন না। এই নিয়েই শুরু হয় গন্ডগোল। একটি ভিডিয়োতে (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) দেখা যায়, সেই সময়ে কালো-সাদা ডোরাকাটা শার্ট পরা এক তরুণ কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র ঢোকাচ্ছেন। যে দৃশ্য নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। কারণ, এমন ঘটনা ত্রিপুরা ক্রিকেটে কখনও ঘটেছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। ক্রিকেটের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক যত দিন যাচ্ছে, তত বাড়ছে। কিন্তু একটি রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার দখল নিয়ে যে পিস্তল বেরোবে, তা ভাবা যায়নি।

Advertisement

যদিও শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ঘটনার কথা জানতেন না ত্রিপুরার ক্রীড়ামন্ত্রী টিঙ্কু রায়। তিনি আপাতত দিল্লিতে রয়েছেন। সেখানেই থেকে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছ থেকে ওই ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্ন শুনে তিনি সরাসরুই বলেন, ‘‘আপনাদের থেকেই বিষয়টা প্রথম জানলাম। আমি গত দু’তিন দিন ধরে দিল্লিতে আছি।’’ সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘‘টিসিএ স্বতন্ত্র সংস্থা। এর সঙ্গে রাজ্য সরকারের ক্রীড়া দফতরের কোনও যোগ নেই।’’ যা শুনে অনেকেই মনে করছেন, ক্রীড়ামন্ত্রী ঘটনাটির দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে, বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলই প্রতিফলিত হয়েছে ক্রিকেট সংস্থার দখল করার চেষ্টায়। যেখানে রাজ্য বিজেপির সমীকরণ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বিজেপির একটি অংশের অভিযোগ, বরদোয়ালি মণ্ডলের নেতা-কর্মীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। উল্লেখ্য, এই বরদোয়ালি আবার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার বিধানসভা কেন্দ্র।

বিজেপির একটি সূত্রে দাবি, সরকারের শীর্ষমহল এই ঘটনা সম্পর্কে অবহিত। বলা হচ্ছে, রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার যে দুই পদাধিকারীর বিরুদ্ধে শনিবার বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে, তাঁরা রাজ্য বিজেপির এক বড় মাপের নেত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’। যে নেত্রীর সঙ্গে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। অভিযোগ, তাপস ও তিমিরকে সরাতে মরিয়া সরকারেরই একটি অংশ। আবার অন্য একটি সূত্রের দাবি, বিভিন্ন মাঠে বাতিস্তম্ভ লাগানোর কাজে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সেখান থেকেই এই ঘটনার সূত্রপাত।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রিপুরা বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘বিসিসিআইয়ে এই রকম ঘটনা বিরল। অমিত শাহ, জয় শাহদের উচিত এই বিষয়ে প্রদেশ বিজেপির সঙ্গে কথা বলা।’’ প্রসঙ্গত, ত্রিপুরা বিজেপিতে এখন একাধিক গোষ্ঠী। মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়েও অনেক বিধায়কের ‘ক্ষোভ’ রয়েছে। যদিও সকলে তা খোলাখুলি বলেন না। তবে সম্প্রতি প্রকাশ্য মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মানিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন রামনগরের বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত। তিনি সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর কেন্দ্রে ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘বৈষম্য’-এর অভিযোগ করেন। অনেকের মতে, যা নতুন পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেই ‘ইঙ্গিত’ অতীতের কথা মনে করাচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে ত্রিপুরার রাজনীতিতে নাটকীয়তম ঘটনা হল, বিধানসভা ভোটের ছ’মাস আগে বিপ্লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে মানিককে আনা। ক্রিকেটের এই গন্ডগোল রাজনীতির খেলাকে কোন দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়, তা নিয়ে ত্রিপুরা বিজেপির অন্দরেও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কৌতূহল তৈরি হয়েছে এ নিয়েও যে, এই ঘটনায় বিসিসিআই কোনও পদক্ষেপ করে কি না, বা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হস্তক্ষেপ করেন কি না।

আরও পড়ুন
Advertisement