Manipur Violence

মণিপুরকাণ্ডের ‘অভিঘাত’ সামলাতেই বাংলা, রাজস্থান, বিহারে ‘নারী নির্যাতন’ খুঁজছে বিজেপি?

মণিপুরের ঘটনা নিয়ে মোদীর বিবৃতির দাবিতে বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে সংসদে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শনিবার সকাল থেকেই ‘মহিলা নির্যাতন’ নিয়ে পাল্টা আক্রমণে নামে বিজেপি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩ ১৬:৩৮
BJP attacks opposition ruled states on crime against women to counter Manipur incident

মণিপুরকাণ্ডে চাপের মুখে পড়ে প্রতিআক্রমণ শুরু করেছেন (বাঁ দিক থেকে) অনুরাগ ঠাকুর, লকেট চট্টোপাধ্যায়, স্মৃতি ইরানি প্রমুখ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৃহস্পতিবারের বক্তব্যেই ইঙ্গিত মিলেছিল। মণিপুরকাণ্ডে চাপের মুখে পড়ে এ বার সেই পথে হেঁটে পুরোদমে প্রতিআক্রমণ শুরু করলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা-নেত্রীরা। গত আড়াই মাস ধরে মণিপুরে ধারাবাহিক হিংসা এবং নারী নির্যাতনের ঘটনার জবাবে এ বার অ-বিজেপি রাজ্যগুলিতে মহিলাদের উপর সাম্প্রতিক কয়েকটি অভিযোগ ঘিরে পাল্টা প্রচারে নেমেছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে বাংলার পাশাপাশি রাজস্থান, বিহারের মতো রাজ্যকে নিশানা করেছেন স্মৃতি ইরানি, অনুরাগ ঠাকুর, অমিত মালবীয়রা।

মণিপুরের ঘটনা নিয়ে মোদীর বিবৃতির দাবিতে বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে সংসদের বাদল অধিবেশনে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শনিবার সকাল থেকেই ‘মহিলা নির্যাতন’ নিয়ে পাল্টা আক্রমণে নেমে পড়ে বিজেপি। দলের আইটি সেলের নেতা অমিত মালবীয় এ রাজ্যের মালদহের বামনগোলায় দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর অভিযোগ নিয়ে টুইট করেছেন। অন্য দিকে, মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য স্মৃতি ইরানি এবং অনুরাগ ঠাকুর সাংবাদিকদের সামনে নারী নির্যাতনের অভিযোগ তুলে নিশানা করেছেন বাংলার তৃণমূল, রাজস্থানের কংগ্রেস এবং বিহারের ‘মহাগঠনবন্ধন’ সরকারকে। টুইটারে অমিত লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আতঙ্ক অব্যাহত। মালদহের বামনগোলা থানার পাকুয়াহাট এলাকায় দুই আদিবাসী মহিলাকে নগ্ন করে নির্মম ভাবে নির্যাতন এবং মারধর করা হয়েছে। পুলিশ তখন নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’’ টুইটারে অমিতের দাবি, গত ১৯ জুলাই মালদহে ওই ঘটনা ঘটে। নারী নির্যাতনের ওই ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘এই মর্মান্তিক ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হৃদয় ‘ভাঙা’ উচিত ছিল। তিনি নিছক ‘ক্রোধ প্রকাশের’ অভিনয় না-ও করতে পারতেন। কারণ তিনি বাংলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও।’’ প্রসঙ্গত, মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানোর ঘটনার ভিডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) এবং গণধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে বৃহস্পতিবার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। টুইটারে বৃহস্পতিবার তিনি লিখেছিলেন, ‘‘মণিপুরের ভয়াবহ ভিডিয়োটি দেখে আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছে। দুই মহিলার উপর উন্মত্ত জনতার নির্মমতা দেখে মনে তৈরি হয়েছে ক্রোধ।’’ মমতার সেই মন্তব্যকেই ‘খোঁচা’ দিয়েছেন অমিত। সেই সঙ্গেই তাঁর অভিযোগ, ‘‘মমতা মালদহের বর্বরতার নিন্দা করেননি। ব্যথা বা যন্ত্রণাও প্রকাশ করেননি, কারণ, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর নিজের ব্যর্থতাই প্রকাশ পেত।’’

Advertisement

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির মুখেও শনিবার এসেছে মালদহ এবং ‘বাংলায় নারী নির্যাতন’ প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় এখন রক্তের খেলা চলছে। কিন্তু ক্ষমতার নেশায় কংগ্রেস বিষয়টি দেখেও না-দেখার ভান করছে। কারণ, তৃণমূলের সঙ্গে তাদের জোট রয়েছে।’’ আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের দাবি, ‘‘মণিপুরের মতোই নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, বিহারে। সংসদে যদি মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, বিহারের পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত।’’ সেই সঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘নাম মমতা হলেও ওঁর মনে মমতার লেশমাত্র নেই।’’ কংগ্রেসের সাড়ে চার বছরের শাসনে রাজস্থান নারী নির্যাতনে দেশের শীর্ষে পৌঁছেছে দাবি করে হিমাচলের বিজেপি নেতা অনুরাগ বলেন, ‘‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো’ (এনসিআরবি)-র নারী নির্যাতন সংক্রান্ত ১৬ পাতার রিপোর্ট সামনে রেখেই আমি এ কথা বলছি।’’ পাশাপাশি, হিংসাদীর্ণ মণিপুরে তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোকে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘জানতে ইচ্ছা করছে, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান বা বিহারেও কি এমন প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে?’’ মালদহের ঘটনা নিয়ে বাংলার মন্ত্রী শশী পাঁজার সাফাইকেও ‘দুঃখজনক’ বলেছেন তিনি। অনুরাগের মন্তব্য, ‘‘বোঝা যায় বাংলার নির্যাতিতারা কেন এখন অভিযোগ জানাতেও ভয় পান।’’ তৃণমূলের সংসদীয় দলের মণিপুর সফরের সময়েই বুধবার সে রাজ্যের থৌবল এবং কঙ্গপকপি জেলার সীমানায় দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনার ভিডিয়ো (যার সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে এসেছিল। ঘটনাচক্রে, দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে মণিপুর প্রসঙ্গে ‘নীরব’ প্রধানমন্ত্রী মোদী বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন বৃহস্পতিবার। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মণিপুরের ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের পক্ষে লজ্জার।’’ পাশাপাশি, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাংলা, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। এ বার এক ধাপ এগিয়ে মহিলা নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে প্রত্যাঘাতের পথে হাঁটলেন বিজেপি নেতৃত্ব। ঘটনাচক্রে, অমিত, স্মৃতি, অনুরাগেরা যে রাজ্যগুলিকে নিশানা করেছেন তাঁদের সবগুলিতেই নবগঠিত বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক ক্ষমতায় রয়েছে।

ঘটনাচক্রে, মণিপুরকাণ্ড সম্পর্কিত ওই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরেই পঞ্চায়েত ভোট পর্বে মহিলাদের উপর হিংসার অভিযোগগুলি নিয়েও সরব হয়েছে বিজেপি। শুক্রবার বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ তোলেন, গত ৮ জুলাই হাওড়ার পাঁচলায় এক মহিলা প্রার্থীকে বুথের ভিতর ঢুকে বিবস্ত্র করে তাঁর যৌনাঙ্গে হাত দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা ভোটের আগে মণিপুরের দায় এড়াতে পরিকল্পিত ভাবেই এই পাল্টা অভিযোগের রাজনীতি শুরু করা হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। ‘‘মণিপুরের ঘটনা আড়াল করতে বিজেপি অন্য রাজ্যগুলি সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার করছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement