প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বেটি বচাও, বেটি পড়াও’ কর্মসূচির দশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চকে ব্যবহার করে আজ দিল্লির মহিলা ভোটব্যাঙ্ককে বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আজ অনুষ্ঠানে মোদী দাবি করেন, এই প্রকল্প আসলে সামাজিক আন্দোলন হয়ে উঠে দেশের লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে সহায়ক হয়ে উঠেছে। কন্যা সন্তান যাতে স্বপ্ন সফল করার জন্য শিক্ষা এবং অন্যান্য সামাজিক সুযোগ পায়, তার ব্যবস্থা করছে এই ‘বেটি বচাও বেটি পড়াও’। মোদীর কথায়, “গত দশ বছরে এটি সমাজকে বদলে দেওয়ার, সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রিত একটি আন্দোলন হিসেবে গড়ে উঠেছে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ এতে শামিল হয়েছেন।”
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে সমাজের যে বিশেষ কয়েকটি অংশকে মোদী চিহ্নিত করেছিলেন তাঁর ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে, নারীশক্তি ছিল তার অন্যতম। দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার জন্য ভোটের বাক্সে বিজেপি সবচেয়ে বেশি আশীর্বাদ পেয়েছে বাড়ির মহিলাদের। পশ্চিমবঙ্গে প্রতিপক্ষ তৃণমূলের কাছে ভোটযুদ্ধে বারবার বিজেপিকে হারতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্পগুলির মোকাবিলায়, সেটিও হিসাবের মধ্যে রেখেছেন মোদী। আর তাই দিল্লির বিধানসভা ভোটের কঠিন লড়াইয়ে নারীশক্তিকে তিনি সঙ্গে চাইছেন, সেই বার্তা আজ স্পষ্ট।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে সব জেলায় ঐতিহাসিক ভাবে নারীর সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় অনেক কম ছিল, সেখানে চোখে পড়ার মতো উন্নতি হচ্ছে। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রচার চলছে। লিঙ্গ সাম্যের গভীরতর গুরুত্বের কথা মানুষ বুঝতে পারছেন।” মহিলাদের উন্নয়নের ডাক দিয়ে মোদী বলেছেন, “যাঁরা এই জনআন্দোলনকে তৃণমূল স্তরে সফল করে তুলেছেন, তাঁদের সাধুবাদ জানাই। আসুন, আমাদের কন্যাদের অধিকার সুরক্ষিত করি, তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করি, এমন সমাজ তৈরি করি যেখানে কোনও বৈষম্য ছাড়া তারা বেড়ে উঠতে পারে।”
আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন (২০২১-২৬) প্রকল্পের বর্তমান পর্যায়ের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। ওই প্রকল্প শুরু হয় ২০০৫-এ। সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল দাবি করেন, ওই প্রকল্পের ফলে দেশবাসীকে উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। যার ফলে প্রসবের সময়ে মায়েদের মৃত্যু গত দশ বছরে প্রায় ২৫ শতাংশ কমে এসেছে। পীযূষ জানান, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে প্রতি লক্ষ শিশুর জন্মের সময় ১৩০ জন মা মারা যেতেন, এখন সেটা ৯৭-এ এসে দাঁড়িয়েছে। একই ভাবে ২০১৪ সালে প্রতি হাজারটি শিশু জন্মালে ৩৯টি শিশু মারা যেত, এখন তা কমে হয়েছে ২৮। পাশাপাশি, দেশের জন্মহার ২.৩ থেকে ২ এসে দাঁড়িয়েছে বলেও জানিয়েছেন পীযূষ। এক জন মহিলা গড়ে যত সন্তানের জন্ম দেন, তাকে জন্মহার বলা হয়ে থাকে। ভারতের মতো দেশে জন্মহার ২.১ থাকলে জনসংখ্যা এক থাকার কথা। কিন্তু ২০২১-এর পর থেকেই ওই জন্মহার পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণের বেশ কিছু রাজ্যে দু’য়ের নীচে নেমে এসেছে। যার অর্থ, ক্রমশ বয়স্কদের দেশে পরিণত হওয়ার দিকে এগোচ্ছে ভারত।