শুক্রবার শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে পটনায় বৈঠকে বসেছিলেন কংগ্রেস, সিপিএম, আপ, তৃণমূল, এনসিপি, আরজেডি, জেডিইউ-সহ সমস্ত বিরোধী। প্রধানমন্ত্রী মোদী সেই বিরোধী ঐক্য নিয়েই নিজের মতামত জানিয়েছেন ভোপালে। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
পটনায় বিরোধী ঐক্যের বৈঠক হয়েছে শুক্রবার। শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বাঁধার সেই বৈঠক নিয়ে অবশেষে মঙ্গলবার মুখ খুললেন দেশের ‘শাসক’ তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পটনায় বিরোধীদের মিলিত হওয়ার ঘটনাকে কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, ‘‘আসলে দুর্নীতিগ্রস্ত বিরোধীরা পরস্পরকে বাঁচাতেই শাসকের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে।’’ তবে একই সঙ্গে মোদী এ-ও জানিয়েছেন যে, কেন্দ্র দুর্নীতি দমনের যে অভিযান শুরু করেছে তা থামবে না। মোদী বলেছেন, ‘‘এক জনও দুর্নীতিবাজ ছাড় পাবে না।’’
মঙ্গলবার মধ্যপ্রদেশের ভোপালে একটি জনসভায় বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ভোপালের সেই মঞ্চ থেকেই তিনি আক্রমণ করেন বিরোধী ঐক্যকে। মোদী বলেন, ‘‘আসলে বিরোধীরা বুঝতে পেরেছে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনও বিজেপিই জিততে চলেছে। তাই এখন তারা জোট বাঁধছে। বৈঠক করছে... কিন্তু মনে রাখবেন বিরোধী মানেই দুর্নীতি আর কেলেঙ্কারির গ্যারান্টি। ২০ লক্ষ কোটি টাকা নয়ছয়ের গ্যারান্টি দেবেন ওঁরা।’’ এ ব্যাপারে দেশের পূর্বতন শাসকদল কংগ্রেসের সঙ্গে রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা শাসকদলগুলিকে একই বন্ধনীতে রেখে মোদী আক্রমণ করেছেন বিরোধীদের। তিনি বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস একাই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে। আরজেডি, তৃণমূল, এনসিপিরও দুর্নীতির দীর্ঘ তালিকা রয়েছে।’’ যদিও যে মধ্যপ্রদেশে দাঁড়িয়ে মোদী এই মন্তব্য করেছেন সেই রাজ্যেরই ব্যাপম নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছিল বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের আমলেই।
২০১৩ সালে এই নিয়োগ কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ এবং মধ্যপ্রদেশের তৎকালীন রাজ্যপাল রামনরেশ যাদবের নামও জড়িয়েছিল ব্যাপম কেলেঙ্কারিতে। অভিযোগ উঠেছিল, ব্যাপম নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যাঁরা মুখ খুলেছিলেন, তাঁদের অনেকেরই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। যদিও সে সব অভিযোগের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরে সেই শিবরাজকে মুখ্যমন্ত্রী করেই আবার মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। মঙ্গলবার মোদীর বক্তব্যেও অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপম প্রসঙ্গ আসেনি। যেমন আসেনি বিজেপি মন্ত্রীর মধ্যপ্রদেশের খনি দুর্নীতির অভিযোগের কথা বা রাজস্থানের বসুন্ধরা রাজে সরকারের জমি দুর্নীতির অভিযোগের কথা। বিরোধীরা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতি এবং পেগাসাস স্পাইওয়ারে অনধিকার আড়ি পাতার অভিযোগও এনেছিলেন। মোদী অবশ্য মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘সব বিরোধীরা একে অপরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি এক জনও দুর্নীতিবাজ ছাড় পাবে না।’’
পটনায় বিরোধীদের বৈঠক পরবর্তী সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির বিরুদ্ধে এজেন্সির রাজনীতি করার অভিযোগ এনেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির মামলা-সহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে এই মুহূর্তে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় ‘এজেন্সি’ অর্থাৎ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই, ইডি। এ ছাড়া দিল্লিতে আম আদমি পার্টির নেতাকে আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করেছে ইডি। দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরেও ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা সূত্রে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। বিরোধীদের সেই ইঙ্গিতের পাল্টা জবাবে মোদী বলেছেন, ‘‘বিরোধীদের বিরুদ্ধে যেই ‘অ্যাকশন’ নেওয়া শুরু হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে তারা জোট বাঁধতে শুরু করেছে। আসলে ওরা দুর্নীতি দমনের চেষ্টায় কেন্দ্রীয় অভিযান থেকে বাঁচতে চাইছে। আর একে অপরকে বাঁচাতে চাইছে। কিন্তু এই অভিযান থামবে না।’’