ইয়েচুরি, মোদী, রাজা এক ফ্রেমে। দিল্লিতে সোমবার। ছবি: পিটিআই।
সিপিএমের বিরোধীরা মঙ্গলবার সকাল থেকেই সুকুমার রায় আওড়াচ্ছেন— ‘ছায়ার সঙ্গে কুস্তি করে গাত্রে হল ব্যথা।’ ছায়া কে? নরেন্দ্র মোদী। কুস্তি কারা করছেন? সীতারাম ইয়েচুরি এবং ডি রাজা। ‘গাত্রে ব্যথা’টা অবশ্য নেহাতই কটাক্ষ।
প্রসঙ্গ— সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে তোলা একটি ছবি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা। ৩ জনেই খোশমেজাজে। প্রায় অট্টহাস্যই করছেন। অষ্টপ্রহর যে বিজেপি এবং মোদীকে বেঁধেন ইয়েচুরি-রাজা, তাঁর সঙ্গে এত হাসি কিসের! কটাক্ষের স্রোত বইতে শুরু করেছে। দুই বামের সঙ্গে ‘রাম’ মোদীর ছবি আলোচনায়। যে ছবি পোস্ট করা হয়েছে স্বয়ং মোদীর ফেসবুক পেজে।
রাজ্য সিপিএম অবশ্য এর মধ্যে আলোচনা বা সমালোচনার কিছু দেখছে না। আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের জবাবে দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দলের দাবিদাওয়া তুলে ধরা ইয়েচুরির টুইটের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে বাস্তব হল, ইয়েচুরির টুইট-বিবৃতির চেয়ে মোদীর ফেসবুক-ছবি অনেক দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে মোবাইল থেকে মোবাইলে।
সেলিম অবশ্য আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘দলের পক্ষে যে দাবিদাওয়া রয়েছে, তা লিখিত আকারেই সীতারাম ইয়েচুরি পেশ করেছেন। সেটা টুইট করেও জানিয়েছেন। তাই এর মধ্যে জল্পনা খোঁজা অবান্তর। সিপিএম মতাদর্শগত ভাবে নিজস্ব অবস্থানেই যে অনড়, তা দাবিদাওয়াতেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য দলের সঙ্গে আমাদের ফারাক হচ্ছে, আমরা জানিয়েছি জি২০ আয়োজন করতে হলে কী কী বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন।’’
Attended the G-20 meeting this evening with leaders of all political parties today. I raised some issues that need serious consideration. The full text is here: https://t.co/92q8R7tRnE pic.twitter.com/O2k4Pvbzoo
— Sitaram Yechury (@SitaramYechury) December 5, 2022
ওই ছবি নিয়ে যাঁরা কটাক্ষ করছেন, তাঁদের একহাত নিয়ে সেলিম বলেন, ‘‘কেউ কোনও বৈঠক করতে গেলে কী করবে? কোথায় কে হেসেছেন, তা কি আলোচনার বিষয় হতে পারে নাকি! এ সব নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে সেটা বাংলার দুর্ভাগ্য।’’
সরাসরি না হলেও ওই আলোচনার জবাব দিয়েছেন ইয়েচুরিও। রামের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ বুঝিয়ে মঙ্গলবার সকালেই তিনি একটি টুইট করেছেন। তাতে ১৯৯২ সালে আজকের দিনে হওয়া ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। এই দিনেই তো অযোধ্যায় সেই সময়ের বিতর্কিত সৌধ ভেঙে ফেলেছিল গেরুয়া শিবির। নিন্দকেরা অবশ্য বলছে, ইয়েচুরিকে ওই টুইটটি করতে হয়েছে খানিকটা বাধ্য হয়েই। ঘটনার প্রেক্ষিতে। তবে একই সঙ্গে অনেকে এমনও বলছেন যে, রাজনৈতিক বিরোধিতা আর ব্যক্তিগত বিরোধিতার মধ্যে ফারাক রয়েছে। প্রবল রাজনৈতিক শত্রুর সঙ্গেও চায়ের আসরে দেখা হলে ‘যুদ্ধং দেহি’ হয়ে আস্তিন গুটিয়ে তো কেউ তেড়ে যায় না! সেটা অপ্রত্যাশিত। সেটা অভব্যতাও বটে। ফলে রামের সঙ্গে বামের রাজনৈতিক বিরোধিতা যা-ই থাকুক, চা খেতে খেতে হাস্য বিনিময় হতে পারবে না— এ কেমন কথা!
Important to never forget what happened on December 6, 1992, to ensure that those dark hours do not return.
— Sitaram Yechury (@SitaramYechury) December 6, 2022
India belongs to all Indians, irrespective of whom they pray to, their caste, gender, region, language, skin colour or occupation.
It is this fraternity, that is India. pic.twitter.com/9PWcgNnnkF
তাঁরা মমতার উদাহরণও টানছেন। ওই বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতা থেকে রওনা হওয়ার ঠিক আগেই জি২০-র ‘লোগো’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। যদিও পাশাপাশিই তিনি জানিয়েছিলেন, পদ্মফুলের ছবি সম্বলিত লোগোটি নিয়ে তিনি নীরবই থাকছেন। কারণ, তিনি মনে করেন এই ধরনের আলোচনা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের সম্মানহানি করতে পারে।
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার বালি থেকে ফেরার পথে মোদী সঙ্গে এনেছেন জি২০ প্রেসিডেন্টের হাতুড়ি। বিশ্বস্তরে অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করে যে আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ সংস্থা, তার প্রধান নেতৃত্বের প্রতি সম্মানজ্ঞাপক প্রতীক সেই হাতুড়ি। সর্বশেষ জি২০ সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়ার থেকে জোটের প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করেছে ভারত। পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কর্মসূচির মধ্যে জি২০’র প্রধান দায়িত্বভার বহন অবশ্যই বিশেষ সম্মানের। ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে দায়িত্ব সম্পাদন শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালের শীর্ষ সম্মেলনটির আয়োজন করা হবে দিল্লিতে। দায়িত্ব পেয়েই মোদী সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন সোমবার। দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রধানদের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৈঠকের শেষে চায়ের আসরে অনেকের মতো সীতারাম ও রাজার সঙ্গেও ছবি উঠেছে মোদীর। সেই ছবি নিয়েই চায়ের ভাঁড়ে তুফান উঠেছে— রামে-বামে কী মিল!
এ রাজ্যে কেন, দেশের কোথাওই বিজেপি বামেদের সঙ্গে জোটের পক্ষপাতী নয়। তবে পঞ্চায়েত ভোটে নীচু স্তরে এমন হলেও হতে পারে বলে আগাম জানিয়ে রেখেছে দুই দলই। সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিএম-বিজেপির জোট দেখা গিয়েছে। তমলুকের সমবায় সমিতির নির্বাচনে সেই জোট অবশ্য শাসক তৃণমূলের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে। রাজনীতিতে সবই সম্ভব বলে যাঁরা মনে করেন, তাঁদের কাছে তাই এই ছবি ‘আলোচ্য’। কটাক্ষের বিষয়ও বটে।