—প্রতীকী চিত্র।
আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সারা দেশ উত্তাল। কলকাতা ছাপিয়ে প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে রাজ্যে রাজ্যে। বহু হাসপাতালে চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগের একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। সেই রিপোর্ট বলছে, এই মুহূর্তে দেশের মোট ১৫১ জন বিধায়ক এবং সাংসদের নামে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। যে তালিকায় রাজ্যগত ভাবে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। দলগত ভাবে অবশ্য অপরাধের অভিযোগে সবচেয়ে বেশি নাম রয়েছে বিজেপি নেতাদের। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ধর্ষণের মামলাও রয়েছে।
২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আয়োজিত বিভিন্ন নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা পড়া প্রার্থীদের হলফনামা ঘেঁটে দেখেছে ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর)। ওই পাঁচ বছর সময়কালের মধ্যে কমিশনে মোট ৪,৮০৯টি নির্বাচনী হলফনামা জমা পড়েছে। তার মধ্যে ৪,৬৯৩টি হলফনামা বিশ্লেষণ করে ৩০০ পাতার দীর্ঘ রিপোর্ট তৈরি করেছে এডিআর। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশের ১৬ জন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে রয়েছে ধর্ষণের মামলা। দোষী প্রমাণিত হলে যার ন্যূনতম শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড। দেশের সবচেয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দল বিজেপি এবং কংগ্রেসের পাঁচ জন করে জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রয়েছে।
মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত মামলায় শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সাংসদ এবং বিধায়ক মিলিয়ে এই রাজ্যের মোট ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এডিআরের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যগত তালিকায় দ্বিতীয় অন্ধ্রপ্রদেশ (২১ জন) এবং তৃতীয় ওড়িশা (১৭ জন)। দলগত বিচারে যে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাতে শীর্ষে দেশের শাসকদল বিজেপি। সাংসদ এবং বিধায়ক মিলিয়ে তাদের ৫৪ জন প্রতিনিধি নিজেদের নামে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলার কথা হলফনামায় স্বীকার করেছেন। দলগত তালিকায় বিজেপির পরেই রয়েছে কংগ্রেস (২৩ জন) এবং তেলুগু দেশম পার্টি বা টিডিপি (১৭ জন)।
বাংলার দুই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রয়েছে। তাঁরা হলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এবং উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমান। এ ছাড়া, চার সাংসদের বিরুদ্ধে রয়েছে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা। সৌমিত্র ছাড়াও সেই তালিকায় রয়েছে বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার, মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু, বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের নাম।
এ ছাড়া, বাংলার যে সমস্ত বিধায়কের নাম মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলার তালিকায় আছে, তাঁরা হলেন মুকুল রায় (কৃষ্ণনগর উত্তর), মনগোবিন্দ অধিকারী (ভাতার), পরেশরাম দাস (ক্যানিং পশ্চিম), লক্ষ্মণ চন্দ্র ঘোরুই (দুর্গাপুর পশ্চিম), অমরনাথ শাখা (ওন্দা), বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা (কার্শিয়াং), বাবুল সুপ্রিয় (বালিগঞ্জ), উত্তর বারিক (পটাশপুর), তপন চট্টোপাধ্যায় (পূর্বস্থলী), দীপক বর্মন (ফালাকাটা), গৌরীশঙ্কর ঘোষ (মুর্শিদাবাদ), কৌশিক রায় (ময়নাগুড়ি), আমিরুল ইসলাম (শমসেরগঞ্জ), অসীম কুমার সরকার (হরিণঘাটা), অসীম বিশ্বাস (রানাঘাট উত্তর পূর্ব), সৌমেন রায় (কালিয়াগঞ্জ), হামিদুল রহমান (চোপড়া), মধুসূদন ভট্টাচার্য (মেমারি), সুব্রত ঠাকুর (গাইঘাটা) এবং অলোক জলদাতা (রায়দিঘি)।
মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলার তালিকায় রয়েছে এক মহিলার নামও! তিনি বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল। যিনি আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক এবং গত লোকসভা ভোটে মেদিনীপুর আসন থেকে লড়ে হেরে গিয়েছিলেন।
সর্বভারতীয় তালিকার দিকে নজর দিলে দেখা যাচ্ছে, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলায় নাম রয়েছে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডির। এ ছাড়া, মহারাষ্ট্রের শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় রাউত, ওড়িশার সুন্দরগড়ের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় আদিবাসী মন্ত্রী জুয়েল ওরাম, ইনদওরের বিধায়ক তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং লালু প্রসাদ যাদবের জ্যেষ্ঠপুত্র তথা বিহারের বিধায়ক তেজপ্রদাপ যাদবের নামও তালিকায় রয়েছে।