অভিযানের গোড়ার দিকে প্রতি দিন ৩ লক্ষ ব্যক্তিকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ছিল সরকারের। প্রথম তিন দিনই অধরা রইল লক্ষ্য। আজ সারা দিনে টিকা নিয়েছেন মাত্র ১,৪৮,২৬৬ জন। প্রতিষেধক নেওয়ার পরে দুই ব্যক্তির মৃত্যু ও ৫৮০ জনের শরীরের উপসর্গ দেখা দেওয়ার ঘটনা খানিকটা হলেও অস্বস্তিতে রাখছে সরকারকে। তার উপর টিকা বেছে নেওয়ার সুযোগ না-থাকা সত্ত্বেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দায় প্রাপকের উপরে চাপানোয় জট বেড়েছে আরও।
শনিবার টিকা নেওয়ার পরে রবিবার উত্তরপ্রদেশে মুরাদাবাদের সরকারি হাসপাতালের কর্মী মহীপাল সিংহ (৫২) এবং কর্নাটকের বেল্লারিতে নাগারাজু (৪৩) নামে এক স্বাস্থ্যকর্মী মারা গিয়েছেন। সরকারি সূত্রের মতে, প্রথম জনের নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট ছিল। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগে আপাত ভাবে মনে করা হচ্ছে দ্বিতীয় জনের মৃত্যু হয়েছে হৃদ্যন্ত্রের সমস্যায়। দু’টি মৃত্যুর কোনওটির সঙ্গেই টিকা নেওয়ার সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসচিব মনোহর আগনানি। তিনি জানিয়েছেন, এ যাবৎ প্রতিষেধক-প্রাপক ৫৮০ জনের শরীরে সামান্য উপসর্গ দেখা গিয়েছে। যাঁদের মধ্যে সাত জনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। দিল্লিতে তিন জনের মধ্যে দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও, এক জন এখনও হাসপাতালে। ছত্তীসগঢ়, উত্তরাখণ্ডে এক জন করে ও কর্নাটকে দু’জনকে হাসপাতালে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
আমেরিকায় টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দায় নিতে হচ্ছে প্রতিষেধক নির্মাতা সংস্থাকে। ভারতেও কি তেমনই হবে? তথ্যের অধিকার আইনে করা এই প্রশ্নের জবাবে সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) আজ জানিয়ে দিয়েছে, এ দেশে সেই দায় কার্যত প্রতিষেধক-প্রাপকদের নিতে হবে। সংস্থার কাছে এই বিষয়ে কোনও তথ্য নেই। যিনি প্রতিষেধক নিচ্ছেন, তাঁকেই প্রতিষেধকের গুণাগুণ খতিয়ে দেখে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সিডিএসসিও-র এই জবাবে সরব হয়েছেন চিকিৎসকদের একাংশ। এমস ও অন্যান্য হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশ্ন, সিডিএসসিও বলছে, গ্রাহকই টিকার গুণাগুণ বিচার করবেন। তবে কেন সরকারি হাসপাতালে কোভ্যাক্সিনের বদলে কোভিশিল্ড চাইলে তা দেওয়া হবে না? কেন সরকার স্থির করে দিচ্ছে, কোন সরকারি হাসপাতালে কোন প্রতিষেধক মিলবে? প্রতিষেধক বেছে নেওয়ার সুযোগ না-থাকলে সিডিএসিও-র বক্তব্য ‘অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের অনেকে। এর জন্য নীতির অস্বচ্ছতা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করেছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
রবিবার ছ’টি রাজ্যে প্রতিষেধক নেন ১৭ হাজার জন। আজ ২৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৭,৭০৪টি কেন্দ্র থেকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়। তিন দিনের লক্ষ্য ছিল ৯ লক্ষ, কিন্তু দেশে প্রাপকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,৮১,৩০৫। আজ দেশে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর্মী প্রতিষেধক নিয়েছেন কর্নাটকে, ৩৬,৮৮৮ জন। দ্বিতীয় ওড়িশা, ২২,৫৭৯ জন। তৃতীয় স্থানে পশ্চিমবঙ্গ, ১৪,১১০ জন।
লক্ষ্যমাত্রা অধরা থেকে যাওয়া নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তারা ঘরোয়া মহলে স্বীকার করছেন, টিকা নেওয়া নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে প্রবল দ্বিধা তৈরি হয়েছে। অনেক রাজ্যেই চিকিৎসকেরা ভারত বায়োটেক-এর প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিন নিতে আপত্তি করছেন। কোভ্যাক্সিনকে ঘিরে এই বিতর্কের পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দায় প্রাপকের উপরে চাপানোর জেরে দেশে গণটিকাকরণ আরও ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।