প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
বসুন্ধরা রাজে তো নয়ই। বিজেপি রাজস্থানে অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী না করায় দলের মধ্যে ক্ষমতায় এলে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। নিজের দলের এই অন্তর্দ্বন্দ্ব ঢাকতে বৃহস্পতিবার নরেন্দ্র মোদী রাজস্থানের ভোটপ্রচারের শেষ দিনে কংগ্রেসের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব খুঁচিয়ে দিতে চাইলেন। বিজেপিকে ক্ষমতায় ফেরাতে গুর্জরদের অসন্তোষ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করলেন।
শনিবার রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বৃহস্পতিবারই ছিল প্রচারের শেষ দিন। শেষ দিনে রাজস্থানে প্রচারে গিয়ে মোদী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কংগ্রেসেরই নেতা প্রয়াত রাজেশ পাইলটের প্রতি অবিচারের অভিযোগ তুলেছেন। সচিন পাইলটকে কোণঠাসা করা হয়েছে বলে তাঁর প্রতি সহানুভূতি দেখানোর চেষ্টা করেছেন। বুধবারও তিনি একই কৌশল নিয়েছিলেন। বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে সচিন পাইলট কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফেরাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। গুর্জর নেতা পাইলট মুখ্যমন্ত্রী হবেন ভেবে গুর্জররা কংগ্রেসকে ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়নি। উল্টে বিদ্রোহ করায় তাঁর উপমুখ্যমন্ত্রী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ গিয়েছে। রাজস্থানের ২০০ আসনের মধ্যে ৩০-৩৫টি আসনে গুর্জররা নির্ণায়ক ভূমিকা নেয়। মোদী তাঁদের ভোট বিজেপির দিকে টেনে আনতে চাইছেন।
বৃহস্পতিবার মোদী বলেন, ‘‘গুর্জর সমাজের এক ছেলে রাজনীতিতে নিজের জায়গা তৈরি করতে লড়াই করে। দলের জন্য জান-প্রাণ দেয়। ক্ষমতা মিলতেই শাহি পরিবারের নির্দেশে তাঁকে দুধ থেকে মাছির মতো তুলে ফেলে দেওয়া হয়। স্বর্গীয় রাজেশ পাইলটের সঙ্গে একই আচরণ হয়েছিল। ওঁর ছেলের সঙ্গেও একই আচরণ হচ্ছে।’’
জবাবে আজ অশোক গহলৌত জয়পুরে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী রাজেশ পাইলটের নাম করে গুর্জরদের উস্কানি দিতে চাইছেন। বিজেপি সরকারের আমলে গুর্জরদের উপরে ২২ বার গুলি চলেছে। ৭২ জন গুর্জর প্রাণ হারিয়েছেন।’’ সচিন পাইলটও মোদীকে আক্রণ শানিয়ে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কথার সঙ্গে বাস্তব তথ্যের কোনও মিল নেই।
রাজেশ পাইলট ইন্দিরা গান্ধীর অনুপ্রেরণায় জনসেবার জন্য কংগ্রেসে এসেছিলেন। আজীবন সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়েছেন। আর আমার বিষয়ে বলতে পারি, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা করার দরকার নেই। সে চিন্তা আমার দল ও জনতা করবে। সনিয়া, রাহুল, প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক পুরনো। এটা হৃদয়ের সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রী আসল বিষয় থেকে জনতার নজর ঘোরাতে চাইছেন। বিজেপির কাছে দেশের জন্য কোনও
রূপরেখা নেই।’’
এরই মধ্যে রাজস্থানে চলতি ভোটের একটি প্রচার-ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছে কংগ্রেস (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার)। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি প্রার্থীর হয়ে প্রচার করতে গিয়ে গহলৌতকে নিশানা করছেন অমিত শাহ। কিন্তু বিজেপি প্রার্থী অমিত শাহকে বলছেন, ‘গহলৌত-পাইলট নিয়ে কিছু বলবেন না, তাতে আমাদের লোকসান হবে। বরং শুধু কংগ্রেস নিয়ে বলুন।’ কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী নিজের দলের কলহ সামলাতে না পেরে এখন পাইলট-গহলৌতের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে চাইছেন।