Coromandel Express accident

‘লাইভ লোকেশন’ পাঠিয়ে দুর্ঘটনার প্রথম খবর জানান করমণ্ডলে থাকা জওয়ান, উদ্ধার করেন বহু যাত্রীকে

জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর জওয়ান ভেঙ্কটেশ এন কে। ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিলেন করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। তিনিই প্রথম ঊর্ধ্বতন আধিকারিককে ফোন করে জানান দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে তাঁদের ট্রেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
বালেশ্বর শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ ১০:১৭
Rescue Operation

দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে এনডিআরএফের জওয়ানরা। ছবি: পিটিআই।

হঠাৎই জোর একটা ঝাঁকুনি অনুভব করেছিলেন ভেঙ্কটেশ। তার পরই দেখলেন তাঁর সহযাত্রীরা এক জন আর একজনের ঘাড়ের উপর ছিটকে পড়ল। তত ক্ষণে কামরার ভিতরের আলোও নিভে গিয়েছিল। যে পেশায় তিনি রয়েছেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকে ভেঙ্কটেশের বুঝতে অসুবিধা হয়নি কী বড় বিপদ হয়ে গিয়েছে। আর এক মুহূর্ত দেরি না করে কলকাতায় নিজের ঊর্ধ্বতন আধিকারিককে ফোন করে জানান, যে ট্রেনে তিনি যাচ্ছেন, সেটি দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে।

পুরো নাম ভেঙ্কটেশ এন কে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) জওয়ান। কলকাতায় পোস্টিং। এনডিআরএফের সেকেন্ড ব্যাটালিয়নে কর্মরত। ভেঙ্কটেশের বাড়ি তামিলনাড়ুতে। ছুটি নিয়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। ভেঙ্কটেশ ছিলেন থার্ড এসি কোচে। আসন সংখ্যা ছিল ৫৮। ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা স্টেশনের কাছে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনাগ্রস্ত হতেই কলকাতায় এনডিআরএফের কন্ট্রোল রুমে প্রথম খবর দিয়েছিলেন ভেঙ্কটেশই। শুধু খবর দেওয়াই নয়, হোয়াটসঅ্যাপে ‘লাইভ লোকেশন’ও পাঠান তিনি। যাতে দ্রুত উদ্ধারকারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এমনই জানিয়েছেন এনডিআরএফের এক আধিকারিক।

Advertisement

খবর পাঠিয়েই থেমে থাকেননি তিনি। কামরার ভিতরে আটকে পড়া সহযাত্রীদের উদ্ধারের কাজেও লেগে পড়েছিলেন ভেঙ্কটেশ। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে তাঁরই কাছে থাকা এক যাত্রীকে প্রথমে উদ্ধার করে কামরার বাইরে নিয়ে আসেন ভেঙ্কটেশ। তাঁকে রেললাইনের ধারে একটি দোকানে বসিয়ে আবার ছুটে যান কামরার ভিতরে বাকিদের উদ্ধারের জন্য। তাঁর কথায়, “কামরা থেকে অন্য যাত্রীদের দ্রুত উদ্ধারের কথা মাথায় ঘুরছিল। কামরার ভিতরে তখন ঘন অন্ধকার। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে আটকে থাকা যাত্রীদের বার করার চেষ্টা করছিলাম। তত ক্ষণে স্থানীয় বাসিন্দারাও চলে এসেছিলেন উদ্ধারকাজে হাত লাগাতে। তাঁরাও আমার সঙ্গে উদ্ধারে হাত লাগালেন। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে যাত্রীদের বার করে আনছিলাম। যত ক্ষণ না উদ্ধারকারী দল এসে পৌঁছয়, তত ক্ষণ আমরা উদ্ধারের কাজ চালিয়ে গিয়েছিলাম।”

ভেঙ্কেটেশের কথায়, “এই সঙ্কটময় মুহূর্তে স্থানীয়েরাও দেবদূতের মতো হাজির হয়েছিলেন। যে, যে ভাবে পেরেছেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ওঁরাই আসল ত্রাতা।” এনডিআরএফের এক কর্তা জানান, ওই সঙ্কটময় মুহূর্তে তাঁর যতটা ক্ষমতা ছিল সবটাই উজাড় করে দিয়েছিলেন ভেঙ্কটেশ। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দল এক ঘণ্টা পরে এসে পৌঁছেছিল। তত ক্ষণ উদ্ধারকাজ চালিয়ে গিয়েছেন ভেঙ্কটেশ। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল, আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

এনডিআরএফ-এর ডিআইজি মহসীন সাহেদি বলেন, “ইউনিফর্ম পরে থাকুন বা না-ই থাকুন, এক জন এনডিআরএফ জওয়ান সব সময়ই ‘অন ডিউটি’তে থাকেন।”

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বালেশ্বেরের বাহানগা স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ২১টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এই ঘটনায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৮৮ জনের। আহতের সংখ্যা আটশোরও বেশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement