কল্পনা কলাহস্তি। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
মহাকাশ বিজ্ঞানে কল্পনা নামটির আলাদা মাহাত্ম্য আছে বোধ হয়! বিশ বছর আগে মহাকাশে পাড়ি দেওয়া প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী ছিলেন কল্পনা চাওলা। আর বুধবার সন্ধ্যায় মহাকাশে ইতিহাস গড়ে যে ‘চন্দ্রযান’ প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামল তারও নেপথ্যে রয়েছেন আর এক কল্পনা। তিনি কল্পনা কলাহস্তি। কর্নাটকের মেয়ে। খড়্গপুর আইআইটির প্রাক্তনী।
বুধবার ভারতের চন্দ্রযান-৩ অবতরণ করেছে চাঁদের মাটিতে। এই প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে কোনও চন্দ্রযান অবতরণ করল। আর বিশ্বের সমস্ত দেশকে পিছনে ফেলে সেই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হল ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। খড়্গপুরে এয়ারোনটিকাল সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করা কল্পনা সেই ইসরোরই বিজ্ঞানী। শুধু তা-ই নয়, কল্পনা চন্দ্রযান-৩ অভিযানের ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’। অর্থাৎ, ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথের পর তিনিই চন্দ্রযান-৩ নিয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা আগামী দিনেও নেবেন। কারণ, তিনি চন্দ্রযান-৩ অভিযানের ডেপুটি ডিরেক্টর।
কিন্তু কল্পনা এক দিনে ‘হাতে চাঁদ’ পাননি। কর্নাটকের এই কন্যা ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতেন ইসরোতে কাজ করার। বিজ্ঞানী হওয়ার। বাবা ছিলেন মাদ্রাজ হাই কোর্টের বিচারপতি। মা গৃহবধূ। চেন্নাইয়ে বিটেক পড়ার পর তিনি চলে আসেন খড়্গপুর আইআইটিতে। সেখান থেকে পাশ করার পর ২০০৩ সালে যোগ দেন ইসরোয়। ঠিক যে বছর ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান মহাকাশচারী কল্পনা পাড়ি দিয়েছিলেন মহাকাশ অভিযানে।
তার পর থেকে ইসরোর বহু উল্লেখযোগ্য কাজে যোগ দিয়েছেন এই কল্পনা। পাঁচ বছর শ্রীহরিকোটায় কাজ করেছেন। পাঁচটি উপগ্রহ তৈরির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন কল্পনা। এর আগে মঙ্গল গ্রহে পাঠানো ইসরোর মঙ্গলযান অভিযানেও কাজও করেছেন তিনি। সেই অভিযানও সফল হয়েছিল। আবার চন্দ্রযান-২-এর বিজ্ঞানী দলেও ছিলেন কল্পনা। সেই অভিযান অবশ্য ব্যর্থ হয়।
কিন্তু ব্যর্থতা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করেননি কল্পনা। চন্দ্রযান-৩-এর কাজ শুরু হতেই আবার কোমর বেঁধে নেমে পড়েন। মোট পাঁচ জন বিজ্ঞানী ছিলেন ইসরোর চন্দ্রযান-৩ অভিযানের মূল দলটিতে। তার মধ্যেই এক জন ছিলেন কল্পনা। বুধবার সন্ধ্যায় চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পর তিনি বলেছেন, ‘‘গত কয়েকটা বছর নিঃশ্বাস ফেলার মতো অবস্থা ছিল না। কিন্তু এই সাফল্য আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। পরিশ্রম জলে যায়নি। তাই আমি খুশি।’’