বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। ছবি: পিটিআই।
বাংলাদেশে চলতি বছরে হিন্দুদের উপর হিংসার ২,২০০টি ঘটনা হয়েছে। বেশির ভাগই ঘটেছে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে। শুক্রবার লোকসভায় এমনটাই জানিয়েছেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিংহ। আরও জানানো হয়েছে, চলতি বছরে পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর হিংসার ঘটনা হয়েছে ১১২টি। লোকসভায় এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যান দিয়ে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী জানান, হিন্দুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য দুই দেশের সরকারকেই লিখেছে নয়াদিল্লি।
শুক্রবার লোকসভায় একটি প্রশ্নের লিখিত জবাব দেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী। সেখানেই প্রতিবেশী দুই দেশে হিন্দুদের উপর হিংসার ঘটনার তথ্য তুলে ধরেন তিনি। এ-ও জানিয়েছেন, সংখ্যালঘু এবং মানবাধিকার সংগঠনের থেকে পাওয়া পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এই তথ্য মিলেছে। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এই ধরনের ঘটনাগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বিদেশ মন্ত্রক এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। ভারতের আশা, বাংলাদেশ সরকার সে দেশে হিন্দু এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব রকমের পদক্ষেপ করবে।’’ একই ভাবে পাকিস্তানের সরকারের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে বিদেশ মন্ত্রক আলোচনা করেছে বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘কূটনৈতিক মাধ্যমে হিন্দুদের উপর হিংসার বিষয়টি পাকিস্তান সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। সে দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, হিংসা, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বন্ধ করা এবং তাদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের সঙ্কট উপযুক্ত আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তুলে ধরা হবে।’’
সংসদে পেশ করা বিদেশ মন্ত্রকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর ৪৭টি অত্যাচারের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছিল। ২০২৩ সালে সেই সংখ্যাটা ছিল ৩০২। ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২,২০০। বিদেশ মন্ত্রক এ-ও জানিয়েছে, বাংলাদেশ বা পাকিস্তান ছাড়া ভারতের অন্য কোনও প্রতিবেশী দেশে হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটেনি। বিদেশ মন্ত্রক বার বার এ-ও আশ্বাস দিয়েছে, হিন্দুদের উপর হিংসার ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান, দুই দেশের সঙ্গেই কথা বলেছে ভারত। ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে গিয়ে এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন বিদেশসচিবও। কীর্তির কথায়, ‘‘ভারতের আশা, হিন্দু এবং অন্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে বাংলাদেশ।’’
গণআন্দোলনের কারণে গত অগস্টে বাংলাদেশ ছাড়েন সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। তার পর থেকেই সেখানকার পরিস্থিতি অস্থির হয়ে ওঠে। সে দেশে বার বার হিন্দু এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অভিযোগও উঠেছে। বাংলাদেশে এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর আমলে সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম পুলিশ। তাতে বাংলাদেশ এবং ভারতে হিন্দুদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এই আবহে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে গত ৯ ডিসেম্বর গিয়ে কথা বলেছেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। বৈঠকের পরে তিনি জানান, বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে আগের মতোই সুসম্পর্ক চায় ভারত। একই সঙ্গে বৈঠকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশও করেন তিনি। এ বার সংসদে সে কথা জানাল বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ।