Police Expedition

‘ধনবর্ষা’র নামে যৌন হেনস্থার চক্র ফাঁস, জালে ১৪

মোবাইলে তোলা এই ভিডিয়ো দেখিয়েই ফাঁদে ফেলা হত দরিদ্র পরিবারগুলিকে। এই চক্রের হাতেই খুন হতে হতে বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তির দৌলতে একটি প্রতারণা চক্রকে পাকড়াও করতে গিয়ে এমন ভিডিয়ো দেখে চমকে গিয়েছিলেন ২০২০ ব্যাচের আইপিএস এবং সম্ভলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনুকৃতি শর্মা।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫ ০৯:৫৬
সম্ভলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনুকৃতি শর্মা।

সম্ভলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনুকৃতি শর্মা। ছবি: সমাজমাধ্যম।

প্রায় অন্ধকার ঘরে সতরঞ্চির উপর মাদকের প্রভাবে আচ্ছন্ন অবস্থায় শুয়ে থাকা নগ্ন এক তরুণী, কয়েক বাক্স ভর্তি টাকার বান্ডিল, একটা কলাপাতার উপর পুজোর কিছু সামগ্রী এবং দুর্বোধ্য মন্ত্রোচ্চারণ।

Advertisement

মোবাইলে তোলা এই ভিডিয়ো দেখিয়েই ফাঁদে ফেলা হত দরিদ্র পরিবারগুলিকে। এই চক্রের হাতেই খুন হতে হতে বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তির দৌলতে একটি প্রতারণা চক্রকে পাকড়াও করতে গিয়ে এমন ভিডিয়ো দেখে চমকে গিয়েছিলেন ২০২০ ব্যাচের আইপিএস এবং সম্ভলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনুকৃতি শর্মা। সেই প্রতারণা চক্রের পিছনে যে এমন কাজকর্ম হচ্ছে, তা প্রথমে ভাবেইনি পুলিশ। একে একে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে গোটা অপরাধ চক্রের কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে পারেন অনুকৃতি ও তাঁর সঙ্গীরা।

সম্ভল পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ধনবর্ষা’ নাম দিয়ে উত্তরপ্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রীতিমতো যৌনচক্র এবং বিরল প্রজাতির প্রাণী পাচার চক্র চলছিল। এই চক্রের পান্ডারা বেছে বেছে গ্রামাঞ্চল এবং মফস্বলের দরিদ্র এবং অল্পশিক্ষিত সেই সব পরিবারকে নিশানা করত, যাদের ঘরে ১৮ থেকে ২২ বছর বয়স অবধি অবিবাহিতা, কুমারী মেয়ে (অল্প কিছু ক্ষেত্রে ছোট ছেলে) রয়েছে। সেই সব পরিবারের কর্তাদের বোঝানো হত, ওই মেয়েই ‘ধনলক্ষ্মী’! সঠিক ভাবে তাঁর পুজো করলেই পিতৃপুরুষের সঞ্চিত ধনসম্পদ ‘ধনলক্ষ্মী’র হাত ধরে বৃষ্টির মতো ঝরে পড়বে গৃহস্বামীর কোলে! এই পুজো করবেন এক জন তান্ত্রিক এবং সেই পুজো হবে সঙ্গোপনে!

এই ‘ধনবর্ষা’ পুজোর উপকরণ হিসেবে কী লাগবে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হত ওটসঅ্যাপের মাধ্যমে। মেয়েটির কোনও প্রেমের বা যৌন সম্পর্কের ইতিহাস থাকলে চলবে না, এ কথা আগেই জানিয়ে দেওয়া হত। এ নিয়ে রীতিমতো ফর্ম ফিলাপ করতে হত গৃহস্বামী এবং তাঁর স্ত্রীকে! এএসপি অনুকৃতি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ধৃতদের মোবাইল থেকে অসংখ্য ভিডিয়ো এবং ছবি মিলেছে। মিলেছে তান্ত্রিকদের দেওয়া সেই ফর্মও, যেখানে কুমারী মেয়েটির জন্মতারিখ থেকে শুরু করে উচ্চতা, ওজন, দেহের মাপ এমনকি শেষ বার কোন দিনে সে রজস্বলা হয়েছিল, তা পর্যন্ত জানাতে হত বাবা-মাকে! তার পরেই হত সেই ‘পুজো’, যেখানে আসলে মাদক দিয়ে মেয়েটিকে আচ্ছন্ন করে যৌন নির্যাতন চালানো হত এবং তা ভিডিয়োবন্দি করা হত। এই ‘ধনবর্ষা’ পুজোর নাম করে বারাণসী, এটা, মথুরা, সম্ভল, মিরাট, ফিরোজ়াবাদ-সহ উত্তরপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে একাধিক দরিদ্র পরিবারের বহু কুমারী মেয়েকে যৌন হেনস্থা করছিল চক্রটি। কোনও টাকাপয়সা না পেলেও রাতারাতি বড়লোক হওয়ার লোভে অনেক বাবা-মা তাঁদের মেয়েকে দু’তিন বার পর্যন্ত তুলে দিতেন এই তান্ত্রিকদের হাতে!

গত কাল গোটা চক্রের সঙ্গে যুক্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে সম্ভল পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, এদের মধ্যে চার জন ‘গুরু’ অথবা ‘কারিগর’ নামে পরিচিত ছিল। তা ছাড়াও আর্টিকেল (যারা এই সব পরিবারের খোঁজ আনত), মিডিয়া (চক্রের সদস্যরা) এবং আরও একাধিক স্তর ছিল। এই ‘গুরু’দের মধ্যে ৪৫ বছর বয়সি রঘুবীর সিংহ আগরার যমুনা ব্রিজ রেল স্টেশনের স্টেশনমাস্টার! আগরারই পাপ্পু লাল, রাঘবেন্দ্র দয়াল এবং ফিরোজ়াবাদের সোনু সিংহও ছিল ‘গুরু’দের দলে। সম্পত্তি কেনাবেচার দালাল এবং জ্যোতিষী হিসেবে পরিচিত ডিএন ত্রিপাঠী নামে এক প্রভাবশালীও এই চক্রে জড়িত ছিল। তাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মোবাইল থেকে পেঁচা, কচ্ছপ-সহ বেশ কিছু বিরল প্রজাতির পশুপাখির ছবিও মিলেছে, যা দেখে পুলিশের অনুমান এই চক্রটি পশুপাখির চোরাচালানেও যুক্ত ছিল।

নিজের এক্স-হ্যান্ডলে অনুকৃতি বলেছেন, ‘‘তরুণী, দীর্ঘাঙ্গী মেয়েকে বিশেষ দিন এবং সময়ে তান্ত্রিক উপযুক্ত মন্ত্র-সহ ‘স্পর্শ’ করলে ধনবর্ষা হবে! এই মামলায় একটা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হল। আমরা কি এখনও অন্ধকার যুগেই বাস করছি?’’

Advertisement
আরও পড়ুন