মণিপুরের জনস্বার্থ ও কারিগরি মন্ত্রীর বাড়ির সামনে তৈরি বাঙ্কার। ছবি: সংগৃহীত।
বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে মণিপুর। দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছে সে রাজ্যে। বিক্ষোভকারীদের রোষের মুখ থেকে বাদ পড়ছেন না রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কেরা। অনেক বিধায়কের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ। এ হেন পরিস্থিতিতে হামলার হাত থেকে বাঁচতে মণিপুরের এক মন্ত্রী নিজের বাড়ির সামনে বাঙ্কার তৈরি করলেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর দাবি, আত্মরক্ষার জন্য বাড়িতে অস্ত্রও মজুত রেখেছেন!
মণিপুরের জনস্বার্থ ও কারিগরি মন্ত্রী তথা খুরাইয়ের বিধায়ক লেইশাংথেম সুসিন্দ্র মেইতেই তাঁর বাড়িতেই একটি বাঙ্কার তৈরি করেছেন। কেন তিনি এমন কাজ করেছেন? লেইশাংথেমের জবাব, ‘‘পরিস্থিতি ভাল নয়। আমার আপ্তসহায়ক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এমনকি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিএসএফ জওয়ানও আক্রান্ত। আমাদের তাই এখন নিজেদেরই আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই কারণেই আমি বাড়ির সামনে বাঙ্কার বানিয়েছি। আমরা চাই শান্তি ফিরুক।’’
গত সোমবার জিরিবামে অসম সীমানা লাগোয়া অঞ্চল থেকে অপহরণ করা হয়েছিল ছ’জনকে। অভিযোগের তির উঠেছিল কুকি গোষ্ঠীর দিকে। দিনকয়েক পর নদীতে ছ’টি দেহ ভেসে আসে। যা নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। নদীতে দেহ মেলার পর থেকেই দিকে দিকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে মেইতেই গোষ্ঠী। প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, শনিবার সে রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী গোবিন্দদাস কন্ঠৌজাম, বিজেপি বিধায়ক ওয়াই রাধেশ্যাম, বিজেপি বিধায়ক পাওনাম ব্রজেন, কংগ্রেস বিধায়ক টিএইচ লোকশ্বরের বাড়িতে আগুন ধরানো হয়। সে সময় মন্ত্রী, বিধায়ক এবং তাঁদের পরিবারেরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। ফাঁকা বাড়িতে ঢুকে বিক্ষোভকারীরা প্রথমে জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন। বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। ইম্ফল পূর্ব জেলার লুয়াংশাংবামে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পৈতৃক বাড়িতে হামলার অভিযোগও ওঠে। হামলা হয় মণিপুরের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সাপম রঞ্জন, বিজেপি বিধায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের জামাতা আরকে ইমোর বাড়িতেও।
রবিবার দফায় দফায় মণিপুরে অশান্তি ছড়ায়। জিরিবামে বেশ কয়েকটি গির্জা, স্কুল এবং বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে। রবিবার সেই জেলার বাবুপাড়া এলাকায় উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায় পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বছর কুড়ির এক যুবকের। বিজেপি এবং কংগ্রেসের দু’টি দলীয় দফতরেও আগুন লাগিয়েছে উত্তেজিত জনতা। অশান্ত এলাকায় যৌথবাহিনীর টহলদারি শুরু হয়। সোমবার সকাল থেকেই মণিপুরের পরিস্থিতি থমথমে।
মণিপুরের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রে ভোটপ্রচারের কর্মসূচি বাতিল করে রবিবার দিল্লি ফিরে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দিল্লি ফিরেই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন তিনি। মণিপুরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। সোমবারও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উচ্চ আধিকারিকদের সঙ্গেও বৈঠকে বসেন শাহ। দফায় দফায় বৈঠকের পরেই মণিপুরের তিনটি মামলার তদন্তভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হাতে তুলে দিয়েছে শাহের মন্ত্রক। এ ছাড়াও, কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুরে অতিরিক্ত ৫০ কোম্পানি সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।