ছত্রপতি শিবাজির সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর তুলনা করায় মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের উপর ক্ষুব্ধ শিন্ডে শিবির। ফাইল চিত্র।
কিছু দিন ধরেই জল্পনা, শিবাজি-বিতর্কে বিজেপির সহযোগী শিন্ডেসেনা এবং বিরোধীদের চাপে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারিকে ইস্তফা দেওয়ার ‘বার্তা’ পাঠাবে কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে ‘করণীয়’ জানতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখেছেন কোশিয়ারি।
সোমবার এনডিটিভি প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়েছে, গত ৬ ডিসেম্বর শাহকে চিঠি লিখে কোশিয়ারি জানতে চেয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল পদে ইস্তফা দেওয়া উচিত কি না। ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘‘অমিত ভাই, আপনি জানেন, ২০১৬ সালে আপনি যখন হলদোয়ানিতে (উত্তরাখণ্ড) ছিলেন, তখনই আমি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলাম, ২০১৯ সালের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না। রাজনৈতিক কোনও পদও নেব না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আপনার আস্থা ও ভালবাসার কারণে বিনম্র কর্মী হিসাবে দায়িত্বগ্রহণ করেছিলাম।’’
প্রসঙ্গত, নভেম্বর মাসে অওরঙ্গাবাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বরেণ্য মরাঠা ব্যক্তিত্বদের উদাহরণ দিতে গিয়ে কোশিয়ারি বলেছিলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রে বৈগ্রহিক চরিত্রের অভাব নেই। প্রাচীন যুগে ছিলেন ছত্রপতি শিবাজি। পরবর্তী সময়ে ভীমরাও অম্বেডকর। বর্তমান সময়ে নিতিন গডকরী।’’
ওই মন্তব্যের পরেই বিরোধী শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে শিবির)-র তরফে মরাঠা ভাবাবেগে আঘাত করার জন্য রাজ্যপালের ইস্তফা দাবি করা হয়। ‘তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে’ একই দাবি তোলে বিজেপির সহযোগী মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা গোষ্ঠীও। শিন্ডেসেনার বিধায়ক সঞ্জয় গায়কোয়াড় বলেন, ‘‘অম্বেডকর এবং নিতিনের সঙ্গে এক আসনে বসিয়ে মরাঠা জাতির আরাধ্য শিবাজি মহারাজের অবমাননা করছেন রাজ্যপাল।’’
পরিস্থিতি সামলাতে ‘আসরে’ নেমেছিলেন গডকড়ী। তিনি বলেন, ‘‘ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ আমাদের ঈশ্বর। এমনকি, বাবা-মায়ের চেয়েও শিবাজি আমাদের কাছে বেশি শ্রদ্ধেয়।’’ কিন্তু তাতেও বিতর্ক ধামাচাপা পড়েনি। বরং মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীসের স্ত্রী অমৃতা প্রকাশ্যে কোশিয়ারির মন্তব্য সমর্থন করায় ক্ষমতাসীন জোটের অন্দরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে বলে প্রকাশিত কয়েকটি খবরে দাবি।
উদ্ধব শিবিরের একাংশ বলছে, শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকলেও উপমুখ্যমন্ত্রী ফডণবীস যে ভাবে সরকারের অন্দরে ক্ষমতার ‘ভরকেন্দ্র’ হয়ে উঠছেন, তাতে শাসকজোটের অন্দরে টানাপড়েন বাড়ছে। উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী কোশিয়ারিকে শিবাজি-মন্তব্য নিয়ে শিন্ডেসেনার আক্রমণ তারই ইঙ্গিতবাহী। শাহকে পাঠানো ৬ ডিসেম্বরের চিঠিতে কোশিয়ারি স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন, ‘মুঘলদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো মহারানা প্রতাপ, গুরু গোবিন্দ সিংহ এবং ছত্রপতি শিবাজির মতো বৈগ্রহিক চরিত্রদের অপমান করার কথা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না।’