—প্রতীকী চিত্র।
নয়াদিল্লি, ২৮ নভেম্বর: ইভিএম-এর বদলে ব্যালটে নির্বাচনের দাবি তোলার পরে মহারাষ্ট্রের ভোটে কারচুপি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলল কংগ্রেস। তাদের প্রশ্ন, মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রাথমিক ভোটের হার ও ভোটগণনার আগে চূড়ান্ত ভোটের হারের মধ্যে প্রায় ৭৬ লক্ষ ভোটের ফারাক কী ভাবে হল? একই প্রশ্ন শরদ পওয়ারের এনসিপির।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের স্বামী পরকলা প্রভাকর এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন তুলেছেন, মহারাষ্ট্রে ভোটগণনার দিন বিকেলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, প্রাথমিক হিসেবে ৫৮.২২ শতাংশ ভোট পড়েছে। পরে চূড়ান্ত হিসেবে জানায়, ৬৬.০৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রায় ৭.৮৩ শতাংশ ফারাক। এর অর্থ প্রায় ৭৬ লক্ষ ভোট। রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ প্রভাকরের যুক্তি, সাধারণত এই ফারাক ১ শতাংশের মতো হয়। প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি জানান, ভোটের প্রাথমিক ও চূড়ান্ত হারে এতখানি ফারাক ‘চিন্তাজনক’।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে দু’দিন আগে দাবি তুলেছিলেন, ইভিএম চাই না। ফের ব্যালট পেপারে নির্বাচন হোক। আজ কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর দাবি তুলেছেন, “ব্যালট পেপার উত্তর নয়। যদি জাল ইভিএম ভোটগণনার সময় যোগ করা হয়, তা হলে ব্যালট বাক্সে জাল ভোটও যোগ হতে পারে। ইভিএম সমস্যা নয়। ভোটগণনার সময়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপিটা সমস্যা।”
ইভিএমে সমস্যা রয়েছে বলে মানতে নারাজ কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদম্বরমও। কার্তি ও তারুর, দু’জনেরই মত, ইভিএম হ্যাক করা বা কারচুপি করা যায় বলে তাঁরা মনে করেন না। তারুর অবশ্য বলছেন, মহারাষ্ট্রের ভোটের প্রাথমিক ও চূড়ান্ত হারের মধ্যে বিস্তর ফারাক গুরুতর বিষয়। কমিশনকে এ নিয়ে জবাব দিতে হবে।
কোথায় প্রশ্ন তুলছে কংগ্রেস ও শরদ পওয়ারের এনসিপি?
বিরোধীদের অভিযোগ, কমিশন ২০ নভেম্বর মহারাষ্ট্রে ভোটগ্রহণের দিন বিকেল ৫টায় জানিয়েছিল, প্রাথমিক হিসেবে ৫৮.২২ শতাংশ ভোট পড়েছে। রাত সাড়ে ১১টায় জানায় ৬৫.০২ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই ফারাকের অর্থ প্রায় ৬৬ লক্ষ ভোট। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এত বাড়তি ভোট কোথা থেকে এল? ভোটগণনার আগের দিন কমিশন জানায়, শেষ হিসেবে ৬৬.০৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। যার অর্থ আরও প্রায় ১০ লক্ষ বাড়তি ভোট যোগ।
খড়্গের দফতরে সমন্বয়ের ভারপ্রাপ্ত নেতা গুরদীপ সিংহ সাপ্পালের বক্তব্য, বিধানসভা নির্বাচনের আগেই কংগ্রেসের জোট অভিযোগ তুলেছিল, প্রতিটি কেন্দ্রে ১০ হাজার বিরোধী জোটের সমর্থকদের নাম ভোটার তালিকা থেকে কাটা যাচ্ছে। বিজেপি ১০ হাজার ভুয়ো ভোটার ঢোকাচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ বিরোধী সমর্থকের নাম কাটা গিয়েছে বলে সন্দেহ ছিল। কাকতালীয় ভাবে মহারাষ্ট্রে লোকসভা নির্বাচন থেকে বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে বিরোধী জোট মহাবিকাশ আঘাড়ীর ৩২.৮ লক্ষ ভোট কমেছে। অন্য দিকে, গত পাঁচ বছরে মহারাষ্ট্রে ৩৭ লক্ষ নতুন ভোটার যোগ হয়েছে। অথচ লোকসভা থেকে বিধানসভার মধ্যে মহারাষ্ট্রের ভোটার তালিকায় ৪৭ লক্ষ নতুন ভোটার যোগ হয়েছে। বিজেপির মহায্যুতি জোটের ভোট বেড়েছে প্রায় ৬৭ লক্ষ।
আজ বিজেপির পাল্টা, কংগ্রেস ওয়েনাড়ে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা জিতলে ইভিএম নিয়ে হইচই করে না। মহারাষ্ট্র হেরে গেলে ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলে। শরদ পওয়ারের এনসিপি-র নেতা জিতেন্দ্র আওহাদের যুক্তি, ঝাড়খণ্ডে দুই দফায় ভোটগ্রহণেই প্রাথমিক ভোট ও চূড়ান্ত ভোটের হিসেবের মধ্যে ১ থেকে ২ শতাংশের মধ্যে ফারাক হয়েছে। ১ থেকে ২ লক্ষের মতো ভোট। অথচ মহারাষ্ট্রে ভোটের হারের প্রায় ৭.৮৩ শতাংশ বা ৭৬ লক্ষ ভোটের ফারাক। নির্বাচন কমিশন এর কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি।