অরবিন্দ কেজরীওয়াল। ছবি: পিটিআই।
বিধানসভা ভোটের বাকি আর মাত্র তিন সপ্তাহ। তার আগে দিল্লিতে আম আদমি পার্টি (আপ) সরকারের জমানায় আবগারি লাইসেন্স বণ্টন সংক্রান্ত নীতিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠে এল ‘ফাঁস’ হওয়া সিএজি রিপোর্টে। সেই রিপোর্টে দাবি, এর ফলে দিল্লি সরকারের অন্তত ২০২৬ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
শনিবার ‘ইন্ডিয়া টুডে’ সেই ‘ফাঁস’ হওয়া সিএজি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে খবর প্রকাশ করেছে। দিল্লির বিধানসভা ভোটের আগে এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে আপ সরকারকে নিশানা করেছে বিজেপি। অন্য দিকে আপের দাবি, পরিকল্পিত ভাবে বিভানসভা ভোটের আগে এই বিজেপি এই রিপোর্ট ফাঁসের ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রসঙ্গত, আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লির বিধানসভা ভোট। গণনা ৮ ফেব্রুয়ারি। তার আগে রিপোর্ট ‘ফাঁসে’র ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতর নতুন মাত্রা পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২১-২২ সালে দিল্লির আবগারি নীতি বদল করেছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সরকার। ২০২১ সালের নভেম্বরে তা কার্যকর হয়েছিল। ‘ফাঁস’ হওয়ায় সিএজি রিপোর্ট বলছে, দিল্লির তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা আবগারি মন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে নতুন আবগারি নীতি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, দিল্লির উপরাজ্যপাল (লেফটেন্যান্ট গভর্নর) ভিকে সাক্সেনা ২০২২ সালের জুলাই মাসেই অভিযোগ করেছিলেন, নতুন আবগারি নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে অনিয়ম হচ্ছে। নতুন আবগারি নীতি কার্যকরের ক্ষেত্রে অসম্মতি জানানোর পাশাপাশি তিনি এ বিষয়ে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছিলেন।
সে সময় দিল্লির মুখ্যসচিব একটি রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছিলেন, সেখানে মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে। মদের ব্যবসায়ীদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিতর্কের জেরে সিসৌদিয়া জানান, যত দিন না নতুন আবগারি নীতি চালু হচ্ছে, তত দিন পুরনো নীতি মেনে চলা হবে। আপ প্রধান তথা দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়াল সে সময়ই অভিযোগ তুলেছিলেন, উপরাজ্যপালের হস্তক্ষেপের কারণে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে দিল্লি সরকার। তিনি বলেছিলেন, ‘‘নতুন আবগারি নীতি চালু হলে দিল্লি সরকার ৪০০০ থেকে ৫০০০ কোটি টাকা রাজস্ব পেত। কিন্তু নতুন নীতিতে বদল আনার জেরে ৩০০ থেকে ৪০০ দোকান বন্ধ হয়ে যায়। ওই দোকানগুলি লাভ করতে পারেনি। লাইসেন্সের খরচও তুলতে পারেনি। এর ফলে সরকারের রাজস্বও কমে গিয়েছে।’’
নীতি বদলে অনিয়ম নিয়ে ইতিমধ্যেই চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। পাশাপাশি, এই ঘটনায় বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে পৃথক তদন্ত করছে আর এক কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি। কেজরী, সিসৌদিয়ার পাশাপাশি আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ এবং তেলঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)-র প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কবিতা দিল্লির আবগারি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাঁদের সকলেই অবশ্য এখন জামিনে মুক্ত। বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর শনিবার বলেন, ‘‘আপের আবগারি নীতি যদি এতই ভাল ছিল, তবে কেন তা বাতিল করা হল? দিল্লিবাসীর কাছে ওরা (আপ) হল ‘আপ-দ’।’’ অন্য দিকে, আপ সাংসদ সঞ্জয়ের প্রশ্ন, ‘‘ভোটের আগেই সিএজি রিপোর্ট ফাঁস হল। রিপোর্ট কি বিজেপির অফিসে বানানো হয়েছে? সিএজি রিপোর্ট কেন সরকারি ভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে না?’’