বালেশ্বরের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া রেলের কামরা। ছবি: পিটিআই ।
কেন ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস! রেল সুরক্ষা কমিশনারের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে প্রথম বার দুর্ঘটনার কারণ বিশদে প্রকাশ করল সরকার৷ দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ জন ব্রিটাস। সেই প্রশ্নের জবাবেই শুক্রবার ওই রিপোর্ট তুলে ধরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, সিগন্যালের ত্রুটির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘ইলেকট্রিক লিফ্টিং ব্যারিয়ার’ যন্ত্র অর্থাৎ, মোটরচালিত যন্ত্রের সাহায্যে ওঠানামা করা রেলগেট প্রতিস্থাপনের জন্য সিগন্যালের কাজ চলছিল স্টেশনের উত্তর সিগন্যাল গুমটিতে। সেই কারণেই সিগন্যালে ত্রুটি দেখা যায়। যার ফলে ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে।
রেল সুরক্ষা কমিশনারের ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘অতীতে উত্তর সিগন্যাল গুমটিতে সিগন্যালের সার্কিটে ত্রুটির কারণে এবং স্টেশনে লেভেল ক্রসিংয়ের ৯৪ নম্বর গেটে মোটরচালিত যন্ত্রের সাহায্যে ওঠানামা করা রেলগেট প্রতিস্থাপনের সময় সিগন্যালের কাজ চলার জন্য সমস্যার জেরে এই দুর্ঘটনা ঘটে।’’
অশ্বিনী জানান, সিগন্যালের ত্রুটির ফলে ভুল লাইনে সবুজ সঙ্কেত দেখানো হয়। যার ফলে ট্রেন এবং মালগাড়ির সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনাকে রেল কর্তৃপক্ষের ‘ত্রুটি এবং অবহেলা’ বলেও উল্লেখ করেছেন রেলমন্ত্রী। সরকারের তরফে আরও জানানো হয়েছে করমণ্ডল দুর্ঘটনায় মৃত ৪১ যাত্রীকে এখনও শনাক্ত করা যায়নি।
একই সঙ্গে সিগন্যালের ত্রুটির কারণে বিগত ৫ বছরে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছিল কি না তা-ও সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের তরফে। জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইন্টারলকিং সিস্টেমে বিগত ৫ বছরে মানবিক ত্রুটি প্রতিরোধে কী কী পদক্ষেপ করেছে সরকার। অত্যাধুনিক ‘কবচ’ প্রযুক্তি এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে পারে কি না সেই প্রশ্নও করা হয় রেলমন্ত্রীকে। জানতে চাওয়া হয়, যদি সরকার এখনও কোনও পদক্ষেপ না করে, তা হলে এই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে রেলের তরফে।
রেলমন্ত্রী জবাবে জানিয়েছেন, বিগত পাঁচ বছরের ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটলেও, তার অভিঘাতে কারও মৃত্যু হয়নি। ইন্টারলকিং সিস্টেমে বিগত ৫ বছরে মানবিক ত্রুটি প্রতিরোধে সরকারের তরফে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা-ও জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী। রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার মুহূর্তে যদি ট্রেনচালক ব্রেক কষতে ব্যর্থ হন, তা হলে কবচ নিজে থেকেই ব্রেক কষতে সক্ষম।
উল্লেখযোগ্য যে, করমণ্ডলকাণ্ডে রেল প্রথমে রেল সুরক্ষা কমিশনার (দক্ষিণ-পূর্ব সার্কল) এএম চৌধরিকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল। তিনি জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে রিপোর্ট জমা দেন। এই ঘটনায় সিবিআইকেও তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল রেল। সেই রিপোর্ট এখনও অসেনি। তবে ওড়িশার বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্তে নেমে রেলের তিন জন কর্মচারী— অরুণকুমার মোহান্ত, মহম্মদ আমির খান এবং পাপ্পু কুমারকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে খবর, অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগে ওই তিন জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তরা বর্তমানে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন। আগামী ২৭ জুলাই তাঁদের মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২ জুন বালেশ্বরের বাহানগা বাজার স্টেশনেই একটি মালগাড়ি ধাক্কা মেরে উল্টে যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। করমণ্ডলের উল্টে যাওয়া বগি ছিটকে গিয়ে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে, যেখান আসছিল যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস। ওই ট্রেনেরও বেশ কিছু বগি লাইনচ্যুত হয়। এই ঘটনায় ২৯৩ জন মারা যান। আহত হন হাজারেরও বেশি মানুষ। গত দুই দশকে এটিই ছিল দেশের সবচেয়ে ব়ড় রেল দুর্ঘটনা।