Kamduni Case

অক্টোবরের ৬ এবং ১৬, কামদুনি-নিঠারিকে মিলিয়ে দিল দুই হাই কোর্টে পাঁচ আসামির ফাঁসি রদের রায়

২০১৩ সালের ৭ জুন কলেজ থেকে ফেরার পথে এক ছাত্রীকে উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে ধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা রাজ্য।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৩৪
An image of Law and Order

—প্রতীকী চিত্র।

ব্যবধান ঠিক ১০ দিনের। মহিলাদের উপর নির্যাতন এবং খুনের ‘বিরলতম’ অপরাধে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্তকে রেহাই দিল দেশের দুই হাই কোর্ট। গত ৬ অক্টোবর কলকাতা হাই কোর্ট ২০১৩ সালের কামদুনি ধর্ষণ এবং হত্যা মামলায় ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত তিন অপরাধীর ‘প্রাণরক্ষা করেছিল’। তাঁদের মধ্যে এক জন পেয়েছিলেন বেকসুর খালাস। সোমবার (১৬ অক্টোবর) ইলাহাবাদ হাই কোর্ট ২০০৬ সালে উত্তরপ্রদেশের নয়ডার নিঠারি হত্যা মামলার দুই মূল অপরাধী মণীন্দ্র সিংহ পান্ধের এবং সুরেন্দ্র কোহলির ফাঁসির সাজা রদ করল।

Advertisement

গত ৬ অক্টোবর কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ কামদুনি মামলায় ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত সইফুল আলি এবং আনসার আলির সাজা বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড করে। পাশাপাশি, কলকাতা নগর ও দায়রা আদালতে (ব্যাঙ্কশাল কোর্ট) আর এক ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলি হাই কোর্টে বেকসুর খালাস পান। অন্য দিকে, নিম্ন আদালতে কামদুনি মামলায় যাবজ্জীবন জেলের সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্কর ১০ বছর জেল খাটার কারণে খালাস পান কলকাতা হাই কোর্ট থেকে।

একই চিত্র সোমবার দেখা গিয়েছে ইলাহাবাদ হাই কোর্টেও নিঠারি কাণ্ডে পিঙ্কি সরকার ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় গাজিয়াবাদের বিশেষ সিবিআই আদালতে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত মণীন্দ্র সিংহ পান্ধের এবং তার পরিচারক সুরেন্দ্র কোহলিকে চরম দণ্ড থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। আদালত সূত্রে খবর, সুরেন্দ্রকে ১২টি মামলায় এবং মণীন্দ্রকে দু’টি মামলায় বেকসুর ঘোষণা করেছে উচ্চ আদালত। তাতেই তাঁদের ফাঁসির সাজা রদ হল। নিঠারি কাণ্ডের ১৯টি মামলার মধ্যে যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে তিনটি মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ১৬টি মামলার মধ্যে সাতটিতে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয় কোহলিকে। মণীন্দ্র অবশ্য মামলায় জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন। পরে পিঙ্কি খুনের মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

২০১৩ সালের ৭ জুন কলেজ থেকে ফেরার পথে এক ছাত্রীকে উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে ধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা রাজ্য। দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ডের মতো তার ঢেউ পৌঁছয় দেশের অন্যান্য প্রান্তেও। দোষীদের চরম সাজার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কামদুনি গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও এর পরে ঘটনার তদন্তের ভার পায় সিআইডি। চার্জশিটে অভিযোগ আনা হয় ন’জনের বিরুদ্ধে। বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন গোপাল নস্কর নামে এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি কলকাতার নগর দায়রা আদালতের (ব্যাঙ্কশাল কোর্ট) বিচারক সঞ্চিতা সরকার দোষী ছ’জনের শাস্তি ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে সইফুল, আনসার এবং আমিনকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। বাকি তিন অপরাধী ইমানুল, আমিনুর এবং ভোলানাথের হয়েছিল যাবজ্জীবন জেলের সাজা। প্রমাণের অভাবে মুক্তি দেওয়া হয় অন্য দুই অভিযুক্ত রফিক গাজি এবং নুর আলিকে। গত ৬ অক্টোবর হাই কোর্টের রায়ে ছ’জন অপরাধীর মধ্যে চার জনই মুক্তি পেয়েছেন। ফাঁসি মকুব হয়েছে তিন জনের।

কামদুনির ঘটনার প্রায় সাত বছর আগে নিঠারিকাণ্ড দেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছিল। ২০০৫-২০০৬ সাল নাগাদ নিঠারিতে একের পর যুবতী, কিশোর-কিশোরী নিখোঁজ হতে শুরু করে। তার তদন্তে নেমে ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর নিঠারির ব্যবসায়ী পান্ধেরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ১৯টি কঙ্কাল এবং কিছু দেহাবশেষ। এই ঘটনায় গোটা দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরে তদন্তে উঠে আসে, শিশু, কিশোর-কিশোরীদের উপর যৌন অত্যাচার চালিয়ে খুন করে তাদের দেহের অংশ প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করে খেয়ে ফেলতেন পান্ধের এবং তাঁর বা়ড়ির পরিচারক সুরেন্দ্র। পান্ধেরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া কঙ্কালগুলির মধ্যে একটি ছিল বাঙালি তরুণী পিঙ্কি সরকারের কঙ্কাল। অভিযোগ ছিল, যৌন নির্যাতনের পরে খুন করা হয়েছিল তাঁকে।

পিঙ্কি খুনে সিবিআই তদন্তে উঠে আসে, বছর কুড়ির বাঙালি মেয়েটি মণীন্দ্রের বাড়িতে পরিচারিকার কাজে ঢুকেছিলেন। তদন্তকারী সংস্থা জানায়, সেখানে তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করে খুন করা হয়। সুরেন্দ্র দোতলার কলঘরে তাঁকে খুন করেন। তার পর তাঁর মাথা কেটে বাকি দেহ প্রেশার কুকারে রান্না করে খেয়ে নেন বলে অভিযোগ ওঠে। ২০০৭ সালের এপ্রিলে পিঙ্কির জামাকাপড় শনাক্ত করেন তাঁর বাবা-মা। পরে সুরেন্দ্র নিজেই পিঙ্কির চটিজোড়া শনাক্ত করেন। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, অন্য মামলাগুলিতেও তিনি নিজেই শিশুদের ধর্ষণ, খুন করে তাদের খেয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন। বিশেষ সিবিআই আদালত সুরেন্দ্র এবং তাঁর মালিক পান্ধেরের অপরাধকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে জানিয়ে প্রাণদণ্ড দিলেন সোমবার তাতে সিলমোহর দিল না ‘ইলাহাবাদ হাই কোর্ট’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement