নয়া বন সংরক্ষণ বিধি বাতিলের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী চিঠি দিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের নয়া বন সংরক্ষণ বিধি কার্যকর হলে আদিবাসীরা অরণ্যের অধিকার হারাবেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
নয়া বন সংরক্ষণ বিধি অনুযায়ী ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ অরণ্য ধ্বংস করতে পারবে শিল্প সংস্থা। কিন্তু সেই ছাড়পত্র দেয়া হলে অরণ্যবাসী জনজাতিদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হেমন্ত। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “২০২২ সালের বন সংরক্ষণ বিধি বিষয়ক বিজ্ঞপ্তিটি ২০০৬ সালের আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার আইনের পরিপন্থী। ৩২টি জনজাতি অধ্যুষিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আপনাকে এ কথা জানানো আমার কর্তব্য বলে মনে করছি।”
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে কার্যকর হওয়া অরণ্যের অধিকার আইনে জঙ্গলের জমি, এবং বিধিসম্মত ভাবে আহরিত অরণ্যসম্পদের অধিকার দেয় সেই সব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর হাতে, যাঁরা অরণ্যবাসী, জীবিকার জন্য অরণ্য-নির্ভর। এই আইনকে আরও কার্যকর করার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আমলেই ২০০৯ সালের একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, যত ক্ষণ না অরণ্যবাসীদের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে, স্থানীয় গ্রামসভার অনুমতি ছাড়া অরণ্যের জমি অন্য কোনও কাজের জন্য ব্যবহার করার ছাড়পত্র কোনও কর্তৃপক্ষ দিতে পারবেন না।
কিন্তু মোদী সরকারের নয়া বিজ্ঞপ্তির ফলে অরণ্যবাসী মানুষদের মতামত নেওয়ার সেই প্রাক্শর্ত উঠে গিয়েছে। কেন্দ্রের ছাড়পত্র পেলেই জঙ্গল কাটতে করতে পারবে শিল্প সংস্থা। মোদীর কাছে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে হেমন্ত লিখেছেন, “দেশের ১০ কোটি নাগরিক অরণ্যভূমিতে বসবাস করেন। প্রাথমিক জীবিকা হিসাবে বনাঞ্চলের উপর নির্ভরশীলদের সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। নয়া বিধি কার্যকর হলে সেই মানুষগুলি তাঁদের অধিকার হারাবেন, যাঁরা নিজেদের অরণ্যের সন্তান বলেন।”
মোদী সরকারের ভারতীয় অরণ্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন হেমন্ত। ওই খসড়াতে বন দফতরের আধিকারিকদের বনের যে কোনও এলাকায় প্রবেশ, তল্লাশি, জোরপূর্বক অরণ্যবাসীদের উচ্ছেদ, এমনকি আইনভঙ্গকারীর প্রতি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা হেমন্তের মতে, নয়া বিজ্ঞপ্তি বা আইন সংশোধনীর ফলে অরণ্যবাসী জনজাতিদের অধিকার যাতে খর্ব না হয়, গ্রামসভাগুলি যাতে গুরুত্বহীন হয়ে না পড়ে তা, নিশ্চিত করার বিষয়টিতে নজর দেওয়া উচিত প্রধানমন্ত্রীর।