Republic Day 2023

মোদীর ‘কর্তব্যপথে’ এই প্রথম বার প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ শুরু হল

এ বারই প্রথম নয়াদিল্লির কর্তব্যপথে আয়োজিত হচ্ছে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে। সেখানে থাকবে শুধু দেশে তৈরি অস্ত্র। পাশাপাশি থাকবে নারীশক্তির প্রদর্শন।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:০৫
প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে এ বার নারীশক্তির উপস্থিতি বাড়ছে।

প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে এ বার নারীশক্তির উপস্থিতি বাড়ছে। ফাইল চিত্র।

স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের সূচনায় লাল কেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, কর্তব্য পথই জীবনের পথ হওয়া উচিত। এর পর দিল্লির রাইসিনা হিলসের উপরে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত যে রাস্তার নাম এখন রাজপথ, তার নাম বদলে ‘কর্তব্য পথ’ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। নতুন নামকরণের পর এই প্রথম বার প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ হল সেই পথে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বদলে যাওয়া রাজপথে পালিত হচ্ছে ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবসের কর্মসূচি।

এ বারই প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে থাকছে শুধু দেশে তৈরি অস্ত্র। পাশাপাশি থাকবে নারীশক্তির প্রদর্শন। গত বছরের স্বাধীনতা দিবসে অমৃত মহোৎসবের সূচনায় ব্রিটিশ জমানার ২৫ পাউন্ডার কামানের বদলে তোপধ্বনিতে ব্যবহার করা হয়েছিল ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উন্নয়ন সংস্থা (‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ বা ডিআরডিও)-র তৈরি ১৫৫ মিলিমিটারের ‘অ্যাডভান্‌সড টাওড আর্টিলারি গান সিস্টেম’ (এটিএজিএস)। এ বার প্রজাতন্ত্র দিবসের ২১ তোপধ্বনি থেকে সরছে ২৫ পাউন্ডার। বদলে আসছে আশির দশকে দেশে তৈরি ১০৫ মিলিমিটার কামান।

Advertisement

বৃহস্পতিবার দিল্লির রাজপথে ডিআরডিও এবং ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড (বিডিএল)-এর তৈরি ‘ভূমি থেকে আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শিত হবে। থাকবে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নাগ এবং রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি শব্দের চেয়ে দ্রুতগামী (সুপারসনিক) ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্মস। ডিআরডিওর তৈরি ভারী ট্যাঙ্ক অর্জুন এবং সাঁজোয়া গাড়িবাহিত ১৫৫ মিলিমিটার হাউইৎজার ‘কে-৯ বজ্র’। প্রতিরক্ষা উৎপাদনে বেসরকারি সংস্থাকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার কথা কয়েক বছর আগেই ঘোষণা করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই নীতি মেনেই টাটা গোষ্ঠীর তৈরি ‘কুইক রিঅ্যাকশন ফাইটিং ভেহিকল্‌’ ঠাঁই নিয়েছে সেনায়। এ বার তা দেখতে পাবেন দেশবাসী।

পরমবীর চক্র বিজেতা মেজর শয়তান সিংহ ভাটির নামে তিন দিন আগেই একটি দ্বীপের নামকরণ হয়েছে আন্দামান নিকোবরে। সেই শয়তান সিংহের নাতনি ডিম্পল এ বারের প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির কর্তব্যপথে কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দিতে চলেছেন সেনার মোটরসাইকেল দলের। চলন্ত বাইকে কলাকৌশল দেখাবেন তিনি ও তাঁর দল। শুধু তিনিই নন, বিএসএফের উটবাহিনী এবং ‘আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমের এ বারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেনার মহিলা অফিসারেরা। প্রতিভা পাটিলের পরে দীর্ঘ দিন বাদে মহিলা রাষ্ট্রপতি হিসাবে সেনা অভিবাদন নিতে চলেছেন দ্রৌপদী মুর্মু।

সেনায় মহিলাদের যোগদান যত বেড়েছে ততই তাঁদের উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখা গিয়েছে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে। ২০১৯ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারতীয় সেনার পুরুষবাহিনীকে নেতৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট ভাবনা কস্তুরি। প্রথম মহিলা অফিসার হিসাবে সেই সম্মানের অধিকারী হন তিনি। তার পরের বছর সেনা দিবসের প্যারেডে প্রথম বার কোনও মহিলা হিসাবে প্যারেডের নেতৃত্ব দেন কোরস অব সিগন্যালের ক্যাপ্টেন তানিয়া শেরগিল। আর গত বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসে নজর কেড়েছিলেন মহিলা বিমানচালক শিবাঙ্গি সিংহ। যিনি এ দেশের প্রথম মহিলা চালক হিসাবে রাফাল যুদ্ধবিমান চালানোর কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এ বারের শোভাযাত্রাতেও মহিলাদের উপস্থিতি আরও বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনা।

দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ‘আকাশ’। সেই ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এ বারে অংশ নিচ্ছে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে। সেই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নেতৃত্বে থাকবেন লেফটেন্ট্যান্ট চেতনা শর্মা। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘‘ছোট থেকেই টিভিতে ওই শোভাযাত্রা দেখে তাতে এক দিন অংশ নেব বলে ঠিক করেছিলাম। এত দিনে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।’’ ছ’বারের চেষ্টায় সেনায় যোগ দেওয়া চেতনার কথায়, ‘‘লক্ষ্য স্থির রেখে পরিশ্রম করে গেলে সফলতা নিশ্চিত ভাবে ছোঁয়া সম্ভব।’’

প্রজাতন্ত্র দিবসের রাজপথে ফি বছর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে চলন্ত মোটরবাইকে সেনার কলাকৌশল। এ বারে মোটরবাইকে ওই কলাকৌশল দেখানোর দায়িত্ব পেয়েছেন সিগন্যাল কোরের অফিসার লেফটেন্যান্ট ডিম্পল। সেনা পরিবারের মেয়ে ডিম্পলের দাদু প্রাক্তন মেজর শয়তান সিংহ ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধে লাদাখের রেজিং লা এলাকায় বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে চিন সেনার অগ্রগতি অনেকাংশে রুখে দিয়েছিলেন। যুদ্ধে শত্রু সেনার হামলায় শেষ পর্যন্ত মারা যান তিনি। তাঁকে মরণোত্তর পরমবীর চক্র খেতাব দিয়েছিল সরকার।

নারীশক্তির প্রদর্শনে পিছিয়ে নেই আধাসেনাও। এ বারের কুচকাওয়াজে প্রথম বার বিএসএফের মহিলা উটবাহিনী অংশ নিতে চলেছে। গত সেপ্টেম্বরে রাজস্থান সীমান্তে পাহারার জন্য বিএসএফ প্রথম মহিলা উটবাহিনী গঠন করেছিল। কুচকাওয়াজে যোগ দিতে চলা উটবাহিনীর ১২ সদস্য গুজরাত, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা। মহিলাদের ক্ষমতায়নের বার্তা দিতেই এ বারের মহিলা উটবাহিনীকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসএফ।

আরও পড়ুন
Advertisement