(বাঁ দিক থেকে) সনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং রাহুল গান্ধী। ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে আবার আয়কর দফতরের নিশানায় কংগ্রেস। এ বার রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গের দলের কাছে ১৭০০ কোটি টাকা চেয়ে পাঠানো হল নোটিস। কেন্দ্রীয় সংস্থাটির একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১ অর্থবর্ষ পর্যন্ত আয়কর সংক্রান্ত রিটার্ন পর্যালোচনা করেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন আয়কর নোটিসের প্রাপ্তি স্বীকার করে শুক্রবার বলেন, ‘‘পুরনো ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে আয়কর রিটার্ন পুনর্মূল্যায়নের নামে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত শয়তানি শুরু হয়েছে।’’
বকেয়া কর, তার সুদ এবং জরিমানার অঙ্ক মিলিয়েই ১,৭০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে বলে ওই সূত্রের দাবি। আয়কর আইনের ১৩(১) ধারা লঙ্ঘনের প্রমাণ মেলার পরেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। গত ১৩ মার্চ আয়কর আপিল ট্রাইবুনালের নির্দেশের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আবেদন দিল্লি হাই কোর্ট খারিজ করার পরেই ধারাবাহিক ভাবে পদক্ষেপ শুরু করেছে আয়কর দফতর।
বৃহস্পতিবারও ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের কর পুনর্মূল্যায়নের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের একটি নতুন আবেদন দিল্লি হাই কোর্ট খারিজ করে দিয়েছিল। তার পরেই পাঠানো হল নতুন নোটিস। ২০১৮-১৯ মূল্যায়ন বর্ষের আয়কর সংক্রান্ত অনিয়মের জন্য ১০৫ কোটি টাকা জরিমানার নির্দেশের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় হস্তক্ষেপ চেয়ে কংগ্রেসের তরফে আর্জি জানানো হয়েছিল হাই কোর্টে। কিন্তু গত ১৩ মার্চ বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বেঞ্চ সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। বৃহস্পতিবারও বিচারপতি বর্মার বেঞ্চেই খারিজ হয় নতুন আবেদন।
এর আগে ১৪ লক্ষ টাকা হিসাবের গরমিলের অভিযোগে কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করে ১৩৫ কোটি টাকা জরিমানা ও সুদ কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। খড়্গেদের দাবি, সে ক্ষেত্রে ‘কারণ’ দেখানো হয়, কংগ্রেসের অ্যাকাউন্টে ১৯৯ কোটি টাকার মধ্যে ১৪.৪৯ লক্ষ টাকা নগদে জমা পড়েছিল। কংগ্রেসের সাংসদেরা ওই চাঁদা দিয়েছিলেন। মাত্র ০.০৭% নগদে লেনদেনের জেরে ১০৬% জরিমানা করা হয়েছে।
চাঁদা মিলেছিল ২০১৭-১৮-তে। তার সাত বছর পরে, ভোটঘোষণার মাত্র তিন সপ্তাহ আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই পুরনো কারণে ২১০ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তার পরে ১৩৫ কোটি টাকা জোর করে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ অভিযোগ তুলেছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। তার পরে আয়কর নোটিস গেল ১,৭০০ কোটির দাবিতে।
গত ২২ মার্চ এআইসিসির কোষাধ্যক্ষ অজয় মাকেন অভিযোগ করেছিলেন, আয়কর দফতর নতুন নোটিস পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘১৯৯৩-৯৪ সালে, যখন প্রয়াত সীতারাম কেশরী কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন, তার ৩১ বছর পরে জরিমানা গুনে দিতে বলা হয়েছে।’’ এ প্রসঙ্গে আয়কর দফতরের যুক্তি— ১৯৯৪-৯৫ সালের আয়কর বিবাদ সংক্রান্ত ওই মামলা ২০১৬ পর্যন্ত বিচারাধীন ছিল। আদালতের রায়ের পরে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা হয়েছে। লোকসভা ভোটে যাতে কংগ্রেস প্রচার, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অর্থ খরচ করতে না পারে, তার জন্যই প্রথমে কংগ্রেসকে আয়কর দফতরের নোটিস ও তার পরে কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে এর আগে অভিযোগ তুলেছেন সনিয়া, রাহুল ও খড়্গে।