Russia-Ukraine War

কী ভাবে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছিল ভারতীয় যুবকদের? তদন্তভার হাতে নিয়ে জানাল সিবিআই

এই মামলার তদন্তভার হাতে নিয়েছে সিবিআই। দেশ জুড়ে অন্তত ১৩টি জায়গায় অনুসন্ধান চালানোর পর কেন্দ্রীয় সংস্থা জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত অন্তত ৩৫ জনকে এ ভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪ ২৩:১৬
ইউক্রেন যুদ্ধে মৃত ভারতীয় যুবক।

ইউক্রেন যুদ্ধে মৃত ভারতীয় যুবক। — ফাইল চিত্র।

কেউ ঘুরতে গিয়েছিলেন। কাউকে আবার লোভনীয় কাজের প্রস্তাব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল রাশিয়াতে। অভিযোগ, তেমনই কিছু ভারতীয়কে ‘জোর’ করে ‘ভুল’ বুঝিয়ে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ইউক্রেন যুদ্ধেও সেনা হিসাবে পাঠানো হয়েছিল। সেই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কী ভাবে দেশ থেকে যুবকদের ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। তদন্তে উঠে এসেছে, এ দেশের কিছু এজেন্ট এবং কোম্পানি ‘জঘন্য’ উপায় অবলম্বন করে ভারতীয় যুবকদের রাশিয়ায় পাঠিয়েছে।

Advertisement

সংবাদমাধ্যম সূ্ত্রে খবর, ভুক্তভোগীদের ‘বেকারত্ব’-এর সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে একদল অসাধু ব্যক্তি। রাশিয়াতে মোটা অঙ্কের বেতনের চাকরি প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে কাউকে ‘ডেলিভারি বয়’-এর চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কাউকে আবার বলা হয়েছিল রুশ সেনাবাহিনীতে সাহায্যকারী হিসাবে কাজ করতে হবে। সেই সঙ্গে এও বলা হয়েছিল, কখনওই তাঁদের সামনে থেকে যুদ্ধ করতে বলা হবে না। এমনকি, ওই দেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল তাঁদের।

এই মামলায় সিবিআই তদন্তভার হাতে নিয়েছে। দেশ জুড়ে অন্তত ১৩টি জায়গায় অনুসন্ধান চালানোর পর কেন্দ্রীয় সংস্থা জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত অন্তত ৩৫ জনকে এ ভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত। মানুষ পাচারের মামলা রুজু করে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাদের দায়ের করা এফআইআরে বেশ কিছু কোম্পানি এবং এজেন্টের কথা উল্লখ রয়েছে।

শুক্রবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতিতে এই মানব ‘পাচার এবং তার সঙ্গে জড়িত ঝুঁকি’র কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘বেশ কিছু ভারতীয় নাগরিককে প্রতারণার জালে ফাঁসিয়ে রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে কাজ করাতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা আবারও দেশবাসীর কাছে আবেদন করছি, কেউ যেন রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে সাহায্যকারী হিসাবে কাজ করার প্রস্তাবে রাজি না হন। এটি যথেষ্ট বিপদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ।’’

সিবিআই এফআইআরে ১৭ জন এজেন্ট এবং কয়েকটি সংস্থার নামের উল্লেখ করেছে। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি সূত্রে খবর, এই প্রতারণা চক্রের অন্যতম ‘মস্তিষ্ক’ হলেন ফয়জন খান। দুবাইয়ের বাসিন্দা এই ফয়জল ‘বাবা’ নামে পরিচিত। ‘বাবা ভ্লগ’ নামে ইউটিউবে একটি চ্যানেলও আছে তাঁর। ‘বাবা’র একটি ভিডিয়োতে তাঁকে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে দেখা গিয়েছে। সেখানে তিনি ওই শহরে গিয়ে থাকার জন্য সকলকে উৎসাহিত করতেও শোনা যায়। ফয়জল এও জানান যে, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহর কত দূরে। সেই শহরে গেলে কী ধরনের কাজ পাওয়া যেতে পারে তার বর্ণনাও দিয়েছেন ফয়জল। মাসে লাখ টাকা কামানোর প্রলোভন দেখানো হয়।

ওই ভিডিয়োতে ফয়জলকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘রাশিয়া সেনাবাহিনীর কাজ কোনও ভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কখনই যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে হবে না। এই কাজের জন্য প্রথম তিন মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সে সময় মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় করার সুযোগ থাকছে। পরে সেটাই এক লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এই কাজে যোগ দিলে সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, প্রত্যেকেই একটা সরকারি কার্ড পাবেন। যা আপনাকে ওই দেশে থাকার সুবিধা দেবে। সেই কার্ড আপনাকে আরও অনেক সুযোগ সুবিধা দেবে।’’

বুধবার ইউক্রেনের যুদ্ধে মহম্মদ আসফান নামে এক বছর ৩০-এর হায়দরাবাদি যুবকের মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই এই চক্রের হদিশ মেলে। তাঁর পরিবাবের দাবি, মহম্মদ এবং তাঁর দুই বন্ধু রাশিয়াতে কাজ করতে যাওয়ার জন্য ফয়জলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে ‘লোভনীয়’ কাজের প্রতিশ্রুতি দেন। তার পরই আসফানরা রাশিয়া পাড়ি দিয়েছিলেন।

সিবিআই তার এফআইআরে জানিয়েছে, রাশিয়ায় পৌঁছনোর পর ভারত থেকে নিয়ে যাওয়া যুবকদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছিলেন এজেন্টেরা। তার পর তাঁদের যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের রাশিয়ান সেনাবাহিনীর পোশাক এবং ব্যাচ দেওয়া হয়েছিল। ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ভারতীয়দের ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেওয়াতে বাধ্য করতেন সে দেশের এজেন্টেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement