(বাঁ দিক থেকে) নীতীশ, জিতনরাম এবং জ্যোতি। — ফাইল চিত্র।
জোট বদলে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বিহার বিধানসভায় আস্থাভোটের মুখোমুখি হবেন নীতীশ কুমার। তার আগে নতুন করে সমস্যা বাড়ল ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটে। মন্ত্রিত্ব না পেয়ে মঙ্গলবার ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঝিঁর দল ‘হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা’ (হাম)-র বিধায়ক জ্যোতি দেবী। সম্পর্কে যিনি জিতনরামের পুত্রবধূ।
জিতনরামেরই জেলা গয়ার বরাচটি কেন্দ্রের বিধায়ক জ্যোতি মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আমি মন্ত্রী হতে পারতাম। সে যোগ্যতাও আমার রয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ তা হতে দিলেন না। তাঁর দল জেডিইউ-র তিন নেতা পোকার মতো মন্ত্রিত্বের কুর্সিতে লেপ্টে রয়েছেন।’’ জ্যোতির অভিযোগের তির নীতীশ-ঘনিষ্ঠ বিজয় চৌধুরী, বীজেন্দ্র যাদব এবং শ্রবণ কুমারের দিকে।
নীতীশের পাশাপাশি জ্যোতি তাঁর শ্বশুর জিতনকেও দুষেছেন। তিনি বলেন, ‘‘উনি (জিতনরাম) চাইলেও আমাকে মন্ত্রী করতে পারতেন।’’ সেই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মুখে যাঁরা নারী ক্ষমতায়নের কথা বলেন তাঁদের কাছে জানতে চাই, নীতীশের মন্ত্রিসভায় এক জনও মহিলা নেই কেন?’’ প্রসঙ্গত, নীতীশের নয়া মন্ত্রিসভায় ‘হাম’ থেকে একমাত্র জিতনের পুত্র সন্তোষ সুমন ঠাঁই পেয়েছেন। জ্যোতির স্বামী জিতনের আর এক পুত্র বলেশ্বর।
‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে নীতীশ কুমার বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-তে যোগদানের পরে বিহার রাজনীতিতে হঠাৎ ‘দামি’ হয়ে উঠেছিলেন জিতনরাম। কিন্তু সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা হাম-এর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি শেষ পর্যন্ত বিজেপি শিবিরেরই থেকে যাওয়ায় পরিষদীয় পাটিগণিতে তাঁর গুরুত্ব কমেছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের অনুমান। ২০১৭ সালে নীতীশ আরজেডি-কংগ্রেসকে ছেড়ে বিজেপির হাত ধরার পরে এনডিএ জোটের অন্দরে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছিলেন জিতন। নীতীশ তাঁকে মন্ত্রী করেননি। এর পরে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস, আরজেডি, রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি (আরএসএলপি)-র মহাগঠবন্ধনে শামিল হন তিনি। কিন্তু মহাজোটের শরিক হিসেবে তিনটি আসনে লড়ে একটিতেও ‘হাম’ জিততে পারেনি। জিতনরাম নিজেও গয়া লোকসভা কেন্দ্রে হেরে গিয়েছিলেন।
এর পর ২০২০-র বিহার বিধানসভা ভোটের আগে এনডিএতে ফিরে যান মহাদলিত নেতা জিতন। তাঁর দল সাতটি আসনে লড়ে চারটিতে জয়ী হয়। মন্ত্রী হন তাঁর ছেলে সুমন। ২০২২ সালের অগস্টে নীতীশের দল এনডিএ ছেড়ে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’-এ শামিল হওয়ার সময় জিতনও তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন। কিন্তু নীতীশের সঙ্গে ফের সংঘাতের কারণে গত জুনে ‘মহাগঠবন্ধন’ ছেড়ে বিজেপির সহযোগী হন তিনি। যদিও গত এক বছরে তেমন কোনও রাজনৈতিক ‘সক্রিয়তা’ দেখা যায়নি তাঁর।
২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১২২ বিধায়কের সমর্থন। বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭৮। নীতীশের ৪৫। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ব্যবধান এক সুতোর, ১২৩। জিতনের দলের চার বিধায়ক পাশে দাঁড়ালে তা পৌঁছবে ১২৭-এ। অন্য দিকে, প্রধান বিরোধী দল আরজেডির রয়েছে ৭৯ জন বিধায়ক। এ ছাড়া, কংগ্রেসের ১৯, সিপিআইএমএল লিবারেশনের ১২, সিপিএমের ২, সিপিআইয়ের ২ এবং ১ নির্দল বিধায়ক রয়েছেন বিজেপি বিরোধী মহাজোটে। অর্থাৎ, ১১৫ বিধায়কের সমর্থন পেতে পারেন লালুরা। এ ছাড়া হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-এর এক জন বিধায়কও প্রয়োজনে ‘মহাগঠবন্ধন’কে সমর্থন করতে পারেন।