গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
মিজ়োরামে দু’দশকের দ্বিমেরু রাজনীতির প্রথা তিনি ভেঙে দিয়েছিলেন ২০১৮ সালে। কংগ্রেসকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে দখল করেছিলেন বিরোধী দলনেতার পদ। জ়োরাম পিপলস্ মুভমেন্ট (জেডপিএম) নেতা লালডুহোমার অনুগামীদের দাবি, এ বার শাসক মিজ়ো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)-কে পিছনে ফেলে আইজলের কুর্সি দখল করবেন তিনি।
আশির দশকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিলেন আইপিএস অফিসার লালডুহোমা। পরে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে হয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং লোকসভার সাংসদ। রাজীব গান্ধীর জমানা। ঐতিহাসিক মিজো চুক্তির মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে শান্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা বলেছে, সম্ভাব্য ত্রিশঙ্কু মিজ়োরাম বিধানসভায় এ বার সরকার গড়ার ক্ষেত্রে নির্ণায়ক হত পারে তাঁর দল।
বাস্তবের সঙ্গে জনমত সমীক্ষা বা বুথ ফেরত সমীক্ষা মেলে না অনেক সময়েই। তবে কয়েকটি জনমত সমীক্ষা বলছে, ৪০ আসনের বিধানসভায় এমএনএফ এবং কংগ্রেস কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ২১ ছুঁতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে আট থেকে ১২টি আসন পেয়ে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে লালডুহোমার দল। এবিপি-সি ভোটার জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস, এমএনএফ ১৩-১৭, কংগ্রেস ১০-১৪, জে়ডপিএম ৯-১৩ এবং নির্দল, বিজেপি ও অন্যেরা মিলে এক থেকে তিনটি বিধানসভা আসনে জিততে পারে। সেই পরিস্থিতিতে একদা কংগ্রেস নেতা এবং পরবর্তীকালে বিজেপির সহযোগী লালডুহোমা কী করবেন তা নিয়ে জল্পনা চলছে মিজোরামে।
২০১৮ সালের নির্বাচনের ঠিক আগে নিজের লালডুহোমা তাঁর দল জ়োরাম ন্যাশনালিস্ট পার্টি-সহ মোট সাতটি দলকে নিয়ে নয়া মঞ্চ জেপিএম গড়েছিলেন। আটটি আসনে জিতে বিধানসভায় দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি হয়েছিলেন। জয়ী এমএনএফ ২৬ এবং এক দশক ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস পাঁচটি আসনে জিতেছিল। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের লালথানহাওলাকে সেরচিপ আসনে পরাস্ত করেন লালডুহোমা। এর পর ‘রাজনৈতিক দল’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে জেডপিএম, তার সভাপতি হন লালডুহোমা। নয়া দলের পদ নেওয়ায় দলত্যাগবিরোধী আইনে বিধায়ক পদ হারালেও উপনির্বাচনে ফের সেরচিপে জয়ী হন। সম্প্রতি, রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম পুরসভা লুংলেইয়ের ভোটে ১১টি আসনের সব ক’টিতেই জয়ী হয়েছেন জেডপিএম প্রার্থীরা।
প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালে অসম থেকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে সোজা ইন্দিরার নিরাপত্তা অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল লালডুহোমাকে। ইন্দিরা জানতে পেরেছিলেন, ১৯৭৭ সালে আইপিএস হওয়ার আগে রাজ্য প্রশাসনিক সার্ভিসের অফিসার হিসাবে মিজোরামের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী সি ছুংগার সহায়ক ছিলেন তিনি। তাঁর রাজনৈতিক জ্ঞান দেখে ইন্দিরাই ১৯৮৪ সালে ফের মিজ়োরামে পাঠান। পুলিশের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে লোকসভার সাংসদ হন লালডুহোমা। তাঁরই মধ্যস্থতাতেই বিদ্রোহী নেতা (তথা এমএনএফ প্রতিষ্ঠাতা) লালডেঙ্গা ১৯৮৬ সালে শান্তি চুক্তি সই করেছিলেন।
এর পরে লালথানহাওলার সঙ্গে সঙ্ঘাতের জেরে কংগ্রেস ছেড়ে প্রথমে মিজ়ো ন্যাশনাল ইউনিয়ন গড়েন লালডুহোমা। পরে যোগ দেন পিপলস কনফারেন্সে। পরের গন্তব্য ছিল লালডেঙ্গার দল এমএনএফ। লালডেঙ্গার মৃত্যুর পরে তাঁর উত্তরসূরি জোরামথাঙ্গা (এমএনএফ প্রধান তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী)-র সঙ্গে বিরোধের জেরে লালডুহোমা তৈরি করেছিলেন জ়োরাম ন্যাশনালিস্ট পার্টি। ২০০৩ এবং ২০০৮ সালে বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে বিরোধী দলনেতা। জনমত সমীক্ষা মিলে গেলে এ বার কি ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় ক্ষমতা যাবে তাঁরই হাতে?