রাকেশ টিকায়েত। ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন নেতা। ফাইল চিত্র।
বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করার কথা শুক্রবার সকালেই ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দীর্ঘ এক বছর ধরে চলা আন্দোলন তুলে নিয়ে কৃষকদের মাঠে ফেরার আবেদনও জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথায় ভরসা রাখতে পারছেন না ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন (বিকেইউ)-এর নেতা রাকেশ টিকায়েত। সরকার যত ক্ষণ না পাকাপাকি ভাবে এই আইন প্রত্যাহারে সিলমোহর দিচ্ছে তত ক্ষণ অবস্থান উঠবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
তাঁর কথায়, “সবে তো শুরু! যত দিন না সংসদে এই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত পাশ হচ্ছে তত দিন অবস্থান জারি থাকবে। খুঁটি তখনই উঠবে যে দিন কাজ পাকা হবে।”
২০২০-র সেপ্টেম্বরে পাশ হয় তিন কৃষি আইন। তার পর থেকেই এই আইনের বিরোধিতায় হরিয়ানা, পঞ্জাব-সহ দেশের নানা প্রান্তে আন্দোলন শুরু হয়। নভেম্বরে কৃষকরা দিল্লিতে গিয়ে ধরনায় বসেন। সেই থেকেই আন্দোলন চলছিল। সেই আন্দোলনের শুরু থেকেই ছিল বিকেইউ। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করতেই বিকেইউ-এর নেতা টিকায়েত হুঙ্কার দেন, ৬০০ কৃষকের আত্মবলিদানকে বিফলে যেতে দেওয়া হবে না। এই আন্দোলনকে মজবুত করতে বহু কৃষক প্রাণ দিয়েছেন। তাঁদের আত্মবলিদানকে উৎসর্গ করে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভাবা হবে। তবে তিনি সাফ জানিয়েছেন, মুখের কথায় নয়, সরকার পাকাপাকি ভাবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ না করলে আন্দোলন জারি রাখা হবে।
অপর কৃষক সংগঠন সংযুক্ত কিসান মোর্চা জানিয়েছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত। তবে সংসদীয় পদ্ধতিতে কার্যকর কবে থেকে হচ্ছে সে দিকেই নজর রয়েছে তাদের। একই সঙ্গে এই কৃষক সংগঠনটি জানিয়েছে, শুধু আইন প্রত্যাহার করলেই হবে না, তাদের আরও বেশ কয়েকটি দাবি রয়েছে। যেগুলি এখনও মানেনি সরকার। সে সব বিষয়ে সরকার কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা-ও নজরে রাখা হবে এবং সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।
গত বছরের নভেম্বর থেকে সিঙ্ঘু এবং টিকরি সীমানায় আন্দোলনে বসেন কৃষকরা। ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে লালকেল্লা পর্যন্ত কৃষকদরে ট্র্যাক্টর র্যালি ঘিরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কৃষি আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত রাজধানী থেকে আন্দোলন না তোলার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় বার বার। দফায় দফায় বৈঠকের পরেও কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। সরকার এবং কৃষক দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে। অবশেষে চাপে পড়ে কৃষি আইন পাশ হওয়ার এক বছর পর খোদ প্রধানমন্ত্রী সেই আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলেন। জয় হল কৃষকদের।