‘আইআইটি বাবা’ অভয় সিংহ। —ফাইল চিত্র।
ছেলে বিদেশে থাকত। মাস গেলে তিন লক্ষ টাকা বেতন পেত। তবু মনমরা হয়ে থাকত সে। তার পরে তো ঘর ছেড়ে গেরুয়া পরে ঘুরছে এখন। কী করে কী হল, কেনই যে বা হল— তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না কর্ণ। তবে ‘হারানো’ ছেলেকে কুম্ভের মেলা থেকে নিয়ে ফেরাটা যে এ যাত্রায় হচ্ছে না, সেটা বুঝে গিয়েছেন তিনি।
প্রয়াগরাজের কুম্ভ মেলার অন্যতম আকর্ষণ এ বার ‘আইআইটি বাবা’— কর্ণের ছেলে, অভয় সিংহ। সাফল্যের জনপ্রিয় ধারণা অনুযায়ী কৃতীর প্রতিষ্ঠা পেয়েও সে সব ছেড়েছেন হেলায়। আর সেই পরিত্যক্ত ‘সাফল্য’ এ বার কুম্ভের বাতাসে পাক খাচ্ছে। তাঁর পূর্বাশ্রম থেকে আহরণ করে আনা বিজ্ঞান মিশছে ত্রিবেণীর ঘোলা জলে। তাতে ডুব দিচ্ছেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী, যাঁদের মধ্যে অনেকের চাওয়া বলতে আইআইটির প্রবেশিকা পরীক্ষায় সন্তানের সাফল্য।
১১ মাস আগে বাড়ি ছাড়া ছেলের সঙ্গে সাক্ষাতের আশা নিয়ে সস্ত্রীক কুম্ভে এসে বিফল মনোরথ হয়েছেন কর্ণ। হরিয়ানার ঝজ্জর জেলা কোর্টের আইনজীবী তিনি। রাজস্থানের কোটায় ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন আইআইটির প্রবেশিকার প্রস্তুতি নিতে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বম্বে আইআইটিতে ভর্তিও হন অভয়। যে প্রস্তুতি, যে পড়াশোনা আর সর্বোপরি যে প্রত্যাশার চাপ নিতে না পেরে অকালে ধরে যায় অনেক তরুণ প্রাণ, সেই সব ধাপে ধাপে উতরে যথাক্রমে কানাডা গিয়ে একটি বিমান তৈরির সংস্থায় চাকরিও করেছেন। মাসে বেতন ছিল ভারতীয় মুদ্রায় তিন লক্ষ টাকা। সেই সব মনে করে আজকাল তালগোল পাকানো একটা অনুভূতি হয়, বলছেন কর্ণ। তাঁর এখন মনে হয়, ছেলেটা অবসাদে চলে গিয়েছিল। তার থেকেই এতকিছু।
কুম্ভের আখড়া থেকে মাঝে উধাও হয়ে যাওয়া আইআইটি বাবা অবশ্য ফিরে এসে বলেছেন, কানাডায় বেতন যেমন ছিল, খরচও ছিল তেমন চড়া। আর বলেছেন যে, তাঁর জন্য না ভেবে বাবা-মা ঈশ্বরচিন্তা করলেই ভাল হয়। জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও দিন বাড়ি ফিরতেও পারেন। কিন্তু এখন নয়।