গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু প্রয়াত হয়েছেন ৬০ বছর আগে। তবুও বিজেপি নেতাদের ধারাবাহিক নিশানা থেকে রেহাই নেই তাঁর। বুধবার নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর অভিযোগ তুললেন, নেহরুর জন্যই নাকি দীর্ঘ দিন ধরে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সুসম্পর্ক তৈরি হতে পারেনি!
সংবাদমাধ্যম ‘নেটওয়ার্ক-১৮’-র সভায় জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘ভারত পঞ্চাশের দশকে চিনের পক্ষ নিয়ে আমেরিকাকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। নেহরুর চিন্তাধারার ফলেই এমনটা হয়েছিল। নেহরু আমেরিকাকে পছন্দ করতেন না। তাই তাঁর সময়ে সকলেই আমেরিকার বিপক্ষে ছিল। নেহরু বলতেন ‘চিন আমাদের মহান বন্ধু’। অন্য সকলেও তা-ই বলতেন।’’ এর পরেই ভারত-চিন মৈত্রীর উদ্যোগকে কটাক্ষ করে জয়শঙ্করের মন্তব্য, ‘‘এখনও অনেকের মনে ‘চিন্ডিয়া’ নামে ধারণা রয়েছে।’’
পঞ্চাশের দশকে কমিউনিস্ট চিনের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল বলেও দাবি করেন জয়শঙ্কর। ঘটনাচক্রে, মাস দুয়েক আগেই ভারত এবং চিনের সম্পর্কের অবনতির জন্যেও জয়শঙ্কর দুষেছিলেন নেহরুর ‘অবাস্তব রোমান্টিক’ নীতিকে। জানুয়ারির গোড়ায় তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘গত ৭৫ বছরের ভারত-চিন সম্পর্কে অনেক অধ্যায় আছে। একটা অধ্যায় বাস্তববোধ সম্পন্ন। আর একটি রোম্যান্টিসিজমে ভরা, বাস্তববোধহীন। যা শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার প্রথম দিন থেকেই। চিনকে কী ভাবে সামলাতে হবে সেটা নিয়ে নেহরু এবং পটেলের মধ্যে বিস্তর মতবিরোধ ছিল। নেহেরুর চিন নীতির তীব্র বিরোধী ছিলেন সর্দার পটেল। আজ নরেন্দ্র মোদী সরকার অনেকটাই বাস্তবোচিত পদক্ষেপ করছে। যেটা শুরু করতে চেয়েছিলেন সর্দার পটেল।”
শুধু জয়শঙ্কর নন, প্রধানমন্ত্রী মোদীও একাধিক বার নানা প্রসঙ্গে নেহরুকে দুষেছেন। এমনকি, বছর দুয়েক আগে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্যেও মোদী নিশানা করেছিলেন নেহরু জমানাকে। নেহরুর ‘অপরাধ’, লালকেল্লা থেকে বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘‘কোরিয়ার লড়াই বা আমেরিকায় কোনও সমস্যা হলে এ দেশের মূল্যবৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়ে।’’ সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘নেহরুর সময়ে মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা এমন গভীর ছিল যে তাঁকে দায় এড়াতে হয়েছিল। বলেছিলেন, ‘কোরিয়ায় লড়াই হলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। আমেরিকায় কিছু হলে দামে প্রভাব পড়ে’। কংগ্রেস এখন ক্ষমতায় থাকলে করোনার উপরে মূল্যবৃদ্ধির দায় চাপিয়ে দিত।’’