একনাথ শিন্দে। —ফাইল ছবি।
মেরিন ড্রাইভ থেকে সামান্য দূরে চার্চ গেটের কাছে বালাসাহেব ভবন। সর্বত্র তাঁর ছবি পুরনো আমলের এই একতলা বাংলোর ঘরে ঘরে। তবে সঙ্গে একমুখ দাড়ি, কপালে তিলক কাটা, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা পরা একনাথ শিন্দের ছবিও একই মাপের। স্থানীয় রাজনৈতিক শিবিরের মতে, মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে টাট্টু ঘোড়ার মতো এগিয়ে চলেছেন একনাথ। বলা হচ্ছে, উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসকে পিছনে ফেলে মহাযুতি জোটের মুখ্যমন্ত্রী-মুখ আপাতত শিন্দে।
২০২২-এ মহাবিকাশ আঘাড়ীকে উল্টে দিয়ে যখন শিন্দে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলের ধারণা ছিল, তিনি নামেই থাকবেন। ফডণবীসই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। আড়াই বছর পরেদেখা যাচ্ছে, তিনি শুধুমাত্র বিজেপি বা দেবেন্দ্রের ছায়া কাটিয়ে বেরিয়ে এসেছেন তা-ই নয়, মহাযুতি জোট এখন তাঁর উপরে নির্ভর করছে ক্ষমতায় ফেরার জন্য।
গত লোকসভায় বিজেপির মহাযুতি জোট ৪৫টি আসনের মধ্যে মাত্র ১৭টি পেয়েছিল। কিন্তু বিজেপির তুলনায় (২৮টিতে লড়ে মাত্র ৯টিতে জয়) শিন্দের ‘স্ট্রাইক রেট’ (১৫টি আসনে লড়ে ৭টিতে জয়) ভাল ছিল। এনডিএ-তে বিজেপির তৃতীয় বৃহত্তম শরিক হিসেবে শিন্দেপন্থী শিবসেনার অবস্থান জোরালো হয় রাজ্য রাজনীতিতে।
শিবসেনা সূত্রের মতে, শিন্দে দুর্দান্ত বক্তা বা অসাধারণ প্রশাসক না হলেও জোটের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে এবং সরকার দক্ষ ভাবে চালাতে পেরেছেন। তাঁর সরকারের ‘লড়কি বহিন যোজনা’, যুব সম্প্রদায়ের জন্য ‘লড়কা ভাউ যোজনা’, কৃষি ঋণ মকুব, পরিকাঠামোয় জোর দেওয়া, বিভিন্ন মন্ত্রকের জন্য বরাদ্দ টাকা মসৃণ ভাবে ছাড়া, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য ৫০টি নিগম খোলার মতো বিষয়গুলি ভোটের ময়দানে কাজ দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক ভাবেও শিন্দে জোটে কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পেরেছেন। লোকসভায় এবং আসন্ন বিধানসভা ভোটে আসন বণ্টনের সময় বিজেপি এবং অজিত পওয়ারের এনসিপি তাঁকে কোণঠাসা করতে পারেনি। কারণ, দিল্লির বিজেপি নেতৃত্বের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন শিন্দে। লোকসভা নির্বাচনে সংরক্ষণ নিয়ে মরাঠা বর্গের ক্ষোভ ধাক্কা দিয়েছিল জোটকে। তার পরে শিন্দে মরাঠা ক্ষোভ নিরসনে পদক্ষেপ করেছেন। তাঁর দলেরই এক নেতার দাবি, “মেট্রো রেল, অটল সেতু, কোস্টাল রোডের পরিকাঠামোর কাজ উদ্ধবের সময়ে ধামাচাপা পড়েছিল। এখন মেট্রোর কাজ শেষ, বুলেট ট্রেনের কাজ শুরু। বালাসাহেব শুরু করেছিলেন বিনা মূল্যের দাওয়াখানা। উদ্ধবের সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল থেকে সেখানে দেওয়া হত বছরে আড়াই কোটি টাকা করে। এখন ১৮৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। নভী মুম্বইয়ে নতুন বিমানবন্দর চালু হয়ে যাবে কয়েক মাসের মধ্যে। যে ভাবে পরিকাঠামো বাড়ছে, চাকরির সুযোগও বাড়ছে।” এরই সঙ্গে তিনি আরও দাবি করেন যে, উৎপাদন শিল্পের থেকে বেশি কাজ জুটছে আইপিও, বিপিও, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে। হিসেব দেওয়া হচ্ছে, আগে মুম্বইয়ে ছিল পাঁচটি বড় পাঁচতারা হোটেল, এখন তার সংখ্যা হয়েছে একুশটি। আর এই কর্মকাণ্ডের প্রধান হিসেবে উঠে আসছে শিন্দেরই নাম।